
প্রিন্ট: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৬:৪৭ এএম
রূপগঞ্জে আড়াই’শ খামারে প্রস্তুত ১৫ হাজার গরু-ছাগল, ১৩ স্পটে বসছে হাট

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ০৪:০২ পিএম

ছবি : রূপগঞ্জে আড়াই’শ খামারে প্রস্তুত ১৫ হাজার গরু-ছাগল
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ২৩টি বড় খামারসহ ছোট বড় সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই’শ খামারে প্রায় ১৫ হাজার গরু-ছাগল প্রস্তুত করা হয়েছে। এবার প্রাকৃতিক ঘাষ, ভুষি, খড় খাইয়ে চাড়ন ভূমিতে লালন করা দেশীয় গরুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। খামারীদের দাবি,বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সেদেশের গরু প্রবেশ না করলে লাভবান হবেন দেশীয় খামারী ও সাধারণ কৃষকরা। এবারে রূপগঞ্জ উপজেলায় সরকারী ও বে-সরকারী ১৩টি স্পটে কোরবানির হাট বসবে। তবে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়কের পাশে হাট বসানোর কারনে দীর্ঘ যানজটের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
সড়েজমিনে ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারে ১৩টি স্পটে গরুর হাট বসছে। এর মধ্যে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ঘেষে হাট বসছে ভুলতা আল্লাহরদান আড়ৎ ও সাওঘাট বিসমিল্লাহ আড়ৎ এবং ঢাকা-বাইপাস সড়ক সংলগ্ন নলপাথর ও মায়ারবাড়ি বেষ্টওয়ে সিটিতে। ওই সব হাটের কারনে ওই দুই মহাসড়কে যানজেরটর আশঙ্কা রয়েছে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।
খামারিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা কৃত্রিমতা নয়, প্রাকৃতিক উপায়ে সবুজ ঘাস, খড়, কুড়া,ভুষি আর চাড়ন ভূমিতে লালন করে গরু রিষ্ট পুস্ট করছেন রূপগঞ্জের খামারিরা। তাদের মাঝে দাউদপুরের আব্দুর রাজ্জাক সিকদার গড়ে তুলেছেন দেশীয় গরুর খামার। যার ২ টি বকনা থেকে ১০ বছরে এখন প্রায় ৩০টি গবাদি পশু। যার দাম ২ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা। যার লালন পদ্ধতি পুরোটাই প্রাকৃতিক। তবে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয় থেকে সেবা না পেয়ে রোগ বালাই ঝুঁকিতে বহু খামারি ও কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলেও রয়েছে অভিযোগ। আব্দুর রাজ্জাক সিকদার আরও জানান, তিনি পেশায় দলিল লিখক। ২০০৪ সাল থেকে সখের বশত ২ বকনা বাছুর থেকে লালন করতে করতে খামারি হয়ে ওঠেন। প্রতি বছর পবিত্র ঈদ উল আযহাকে টার্গেট করে প্রস্তত করেন গরু। পাশাপাশি দুধের চাহিদা মেটাতে গাভী পালনেও সফলতা পেয়েছেন তিনি।
আব্দুর রাজ্জাক সিকদার, বলেন, শুধুমাত্র নিজ চাড়ন ভূমিতে গরু লালন করায় আমার খামার থেকে স্থানীয়রাই বেশি গরু ক্রয় করেন। এতে উৎসাহিত হয়ে আমার পেশা হিসেবে খামারকে বেছে নেই। বর্তমানে প্রায় ৩৫ টি গরু রয়েছে। যাদের দাম নুন্যতম ২ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৫ লাখের অধিক। ভারত বাংলাদেশের বৈরী সম্পর্কে দেশী খামারীরা লাভবনা হবে জানিয়ে আব্দুর রাজ্জাক সিকদার আরও বলেন, সব সময় ঈদ এলে ভারতের সীমান্ত দিয়ে চোরাই গরু প্রবেশ করে। এ বছর গরু আসার সম্ভাবণা নাই। ফলে দেশীয় খামারীরা তাদের ন্যায্যমূল্য পাবেন।
খামার মালিকরা বলছেন, খামার থেকেই কোরবানীর পশু বিক্রি শুরু হয়েছে। ক্রেতারা গরু কিনে খামারেই রেখে যাচ্ছেন। ক্রয়কৃত পশু সুবিধামত সময়ে ক্রেতাদের বাড়িতে পৌছে দেয়া হবে। হাটের ঝামেলা এড়িয়ে সুস্থ সবল উন্নত জাতের গরুর কারণে এখানকার ফার্ম গুলো দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ কারণে ইতি ামধ্যেই বিক্রি শুরু হয়েছে কোরবানীর পশু। এছাড়াও এসব ফার্মের গরু গুলো ক্ষতিকারক ক্যামিকেল মুক্ত ও কোনো প্রকার ইনজেকশন প্রদান না করে দেশীয় খাবার খাইয়ে মোটাতাজা করা হয়ে থাকে। এই কারণে কোরবানীর ঈদে এখানকার ফার্মের গরু গুলোর চাহিদা তুলনামূলকভাবে একটু বেশি। খামারিদের আশা অবৈধ পথে ভারত থেকে গরু না এলে লাভবান হবেন তারা।
খামারে নিয়োজিত কর্মচারীর ফোরকান মিয়াবলেন, খড় ঘাষ, ভূষি,কলের পানি আর ভাতের মাড় খাইয়ে বিগত ১৩ বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে দেশীয় গরু লালন পালন হচ্ছে। এখানে বিন্দু পরিমাণ রাসায়নিক খাবার, অস্বাস্থ্যকর কোন কিছু ব্যবহার করে মোটাতাজা করা হয় না।
এদিকে সাধারণ কৃষকদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, কুরবানি মুসলিমদের ইবাদতের অংশ। প্রাকৃতিক উপায়ে রিষ্ট পুষ্ট গবাদি পশুই কেবল পবিত্র ঈদ উল আযহার উপযুক্ত। আর অবৈধভাবে মোটাতাজা করে তা এবাদতের জন্যে বিক্রি করা প্রতারণা ছাড়া কিছুই না। পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের জন্যে চরম হুমকি। তাই ক্রেতা সাধারণের সচেতন হওয়া জরুরি বলে দাবী করেন তারা।
স্থানীয় কৃষক মোবারক হোসেন বলেন, কোন গরু ফিট খাওয়ানো আর কোন গরু ঘাষ খাওয়ানো তা ক্রেতাকে বুঝতে হবে। অল্পদিনে মোটাতাজা করে বাজারে নেয়া গরু স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর। তাই যারা কুরবানি বা কোন অনুষ্ঠানে মাংসের চাহিদা পুরন করতে চায় তাদের উচিত সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে গবাদি পশু সংগ্রহ করা।
এবার রূপগঞ্জ উপজেলায় ২৩টি বড় খামারসহ উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নে ছোট- বড় মিলিয়ে আড়াই’শটি খামারে প্রায় ১৫ হাজারের বেশি গরু, ছাগল, দুম্বা কোরবানীর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। পাশাপাশি হাটবাজারে কোরবানীর পশু বিক্রি হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেবই কাজির বাগ আলিম মাদরাসায় অধ্যক্ষ মাওলানা শাহরিয়ার আহমেদ বশির বলেন, মহান আল্লাহর আদেশে মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ:) কর্তৃক নবী পূত্র ইসমাইল (আঃ)কে কুরবানির আলৌকিক ঘটনার পর থেকে শুরু হয় পশু কুরবানীর ইবাদত। আর ইবাদত পালনে খামারি কিংবা কৃষকদের প্রতারণা পরিহার করে পবিত্রতা রক্ষায় প্রয়োজন প্রাকৃতিক উপায়ে পশু পালন করা। অন্যথায় অবৈধভাবে মোটাতাজা বা ভেজাল করলে তা ইবাদত হিসেবে গন্য হবে না। আল্লাহ সবার মনের খবর জানেন।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার সজল কুমার দাস বলেন, বছরব্যাপী গরু মোটাতাজাকরণের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ আমরা খামারি এবং কৃষকদের দিয়ে থাকি। উপজেলার ফার্মের গরু গুলোকে সময় মতো স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও প্রয়োজনীয় ঔষধ প্রদান করা হয়। তাই ক্রেতাদের কাছে এখানকার ফামেৃর সুস্থ সবল গরুর রয়েছে বেশ চাহিদা। এজন্য এসব ফার্মে কোরবানীর ঈদে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীড় দেখা যায়। এবার আশা করা যায় উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে কিছু পশু আমরা রাজধানী সহ আশেপাশে কয়েকটি জেলায় প্রেরণ করতে পারব। কোরবানির হাটকে ঘিরে আমাদের মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরপাত্তায় প্রতিটি হাটে পর্যাপ্ত আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত থাকবে।