চার অসহায় নাগরিকের পাশে নারায়ণগঞ্জের মানবিক ডিসি
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৮:১১ পিএম
ছবি : চার অসহায় নাগরিকের পাশে নারায়ণগঞ্জের মানবিক ডিসি
সন্তানের বিয়ের খরচ থেকে শুরু করে চিকিৎসা ও বাসাভাড়ার জটিলতায় এগিয়ে এলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো যেন নিত্যদিনের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার। যারাই সহায়তার জন্য তার দফতরে যাচ্ছেন, খালি হাতে ফিরছেন না কেউই। সম্প্রতি চারজন অসহায় নারী-পুরুষের পাশে দাঁড়িয়ে আবারও প্রমাণ করলেন তিনি একজন মানবিক প্রশাসক।
সদর উপজেলার মধ্য সনাপুর এলাকার বিধবা মোছাঃ সাবরিনা বেগম চার বছর আগে স্বামী হারিয়ে একা হয়ে পড়েছেন। তিন কন্যাসন্তানকে নিয়ে মানবেতর জীবন পার করছেন। বড় মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব এলে হতাশাগ্রস্ত সাবরিনা আশ্রয় নেন জেলা প্রশাসকের কাছে।
তার দুঃখগাথা শুনে জেলা প্রশাসক তাৎক্ষণিক আর্থিক সহায়তা দেন এবং ছোট দুই মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
এদিকে ফতুল্লা ফ্যাশন লিমিটেডের সাবেক বাণিজ্যিক কর্মকর্তা জামাল আহমেদ গত বছরের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে চাকরি হারান। তার প্রতিষ্ঠানে বেতন ছিল চার মাস বকেয়া, যা মালিকপক্ষ এখনো পরিশোধ করেনি।
চাকরি হারিয়ে তিনি পরিবারসহ চরম দুরবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি তার করুণ অবস্থার কথা তুলে ধরেন।
জেলা প্রশাসক তার বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে তাকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।
গত বছর আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হন ফতুল্লার মাসদাইর এলাকার যুবক আব্দুস ছালাম মুন্না। শরীরে এখনো ছোড়া গুলি রয়ে গেছে। তার চিকিৎসার জন্যও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা প্রদান করা হয়।
অন্যদিকে, চিতাশাল সর্পের চর এলাকার বয়োবৃদ্ধ মো. বাবুল চোখের সমস্যায় ভুগছিলেন। অপারেশনের খরচ জোগাড় করতে না পেরে তিনি জেলা প্রশাসকের দ্বারস্থ হন। ডিসি জাহিদুল ইসলাম তার চিকিৎসার খরচের জন্য অর্থ সহায়তা দেন।
সহায়তা পাওয়া সাবরিনা বলেন, “অনেকের মুখে শুনেছি ডিসি স্যারের কাছে কেউ খালি হাতে ফেরে না, আজ নিজ চোখে দেখলাম।”
গার্মেন্টস কর্মকর্তা জামাল বলেন, “উনি শুধু টাকা দেননি, আমার কথা মন দিয়ে শুনেছেন—এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া।”
আবদুস ছালাম মুন্না বলেন, “এই টাকায় চিকিৎসার বাকি কাজটা শেষ করতে পারব।”
অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে মো. বাবুল বলেন, “ডিসি স্যার আমি সালাম দেওয়ার আগেই উনি সালাম দিয়েছেন, মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করেছেন। এমন মানুষজনই তো প্রকৃত জনসেবক।”
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার এমন মানবিক কাজ জেলাব্যাপী ইতোমধ্যেই প্রশংসিত হয়েছে। অনেকেই বলছেন, একজন ডিসির দায়িত্ব শুধু প্রশাসনিক কাজ নয়, জনগণের পাশে দাঁড়ানোও তার নৈতিক দায়িত্ব—আর সেটিই করে চলেছেন তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে।



