শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

মানুষ কোরবানির শিক্ষা ভুলে গেছে : এড. তৈমূর

প্রকাশিত: ২০ আগস্ট ২০১৮  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : এড. তৈমূর আলম খন্দকার। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির অভিভাবক হিসেবে পরিচিত এই নেতা বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রুপগঞ্জের সন্তান তৈমূর আলমের অবসর কাটে নিজের ব্যক্তিগত লাইব্রেরীতে বই পড়ে ও বিভিন্ন সমসাময়িক বিষয়ে কলাম লিখে।

অন্ধ ও বধিরদের নিয়ে কাজ করা তৈমূর মুত্যুর আগে নারায়ণগঞ্জে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত করতে চান। যুগের চিন্তা ২৪ এর ঈদ আড্ডায় কথা বলেছেন ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনের নানান দিক নিয়ে। আড্ডার অংশ বিশেষ তুলে ধরা হলো যুগের চিন্তা ২৪ এর পাঠকদের জন্য।  

যুগের চিন্তা: কেমন আছেন?

তৈমূর আলম: সরকার নিপীড়ন নির্যাতনের মাধ্যমে দেশ চালাচ্ছে। একদিকে বলছে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের আন্দোলন যৌক্তিক, নিরাপদ সড়কের আন্দোলন তাদের চোখ খুলে দিয়েছে। আবার সেই শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করছে, তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাদের লাশ ভেসে উঠছে নদীতে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের গুটিকয়েক লোক ছাড়া আর কেউ ভাল নেই।

যুগের চিন্তা: রাত পোহালেই কোরবানির ঈদ। এবারের ঈদের পরিকল্পনা কী?

তৈমূর আলম: কোরবানির ঈদে নেতাকর্মীদের সঙ্গেই আছি। ঈদের পরদিন রুপগঞ্জের বাড়িতে তাদের নিয়ে ঈদ পালন করবো। ঈদের দিন নামাজ শেষে ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করতে জেলগেটে যাবো।

যুগের চিন্তা: শৈশবের ঈদের কথা মনে পড়ে?

তৈমূর আলম: ছোট বেলার ঈদ মাইেনতো দাদা বাড়ি। এখন নারায়ণগঞ্জ আর রুপগঞ্জের রুপসী মিলিয়েই হয়। কোরবানি আগে দিতাম শুধু রুপসীতে এখন নারায়ণগঞ্জ আর রুপগঞ্জ দু যায়গাতেই।

যুগের চিন্তা: শৈশবের কোরবানির সঙ্গে এখনকার ঈদের তফাৎটা কেমন বুঝছেন?

তৈমূর আলম: মানুষ কোরবানির শিক্ষা ভুলে গেছে।  গরু কেনানটাই এখন প্রধান হয়ে উঠেছে।  মনে পড়ে, আমার ব্যারিষ্টার মেয়েটা তখন একবারে ছোট। তাকে নিয়ে গেলাম গরু কিনতে। মেয়ে আমার পছন্দ করলো বাজারের সবচেয়ে বড় গরুটা। সেটার দাম ছিলো সতের হাজার টাকা। আমার কাছেতো এতো টাকা নেই। কি আর করা? গরু নিয়ে চলে আসলাম বাড়িতে। তারপর বাড়িতে এসে টাকা নিয়ে গরুর মালিককে দিলাম। এখন একটা কথা ভাবি, কয়েক বছর আগেও যেখানে ১৭ হাজার টাকায় বাজারের বড় গরুটা কেনা যেতো এখন সেখানে দুই আড়াই লাখ টাকা না হলে গরুই কেনা যায় না।

যুগের চিন্তা: আজকের তৈমূর আলম হয়ে উঠার গল্পটা কেমন?

তৈমূর আলম: রাজনীতি শুরু করি শ্রমিক আন্দোলন দিয়ে। আমি দুই চাক্কা শ্রমকিদেরও নেতা ছিলাম আবার আইনজীবি নেতাও হয়েছি। রাজনীতির শুরু থেকে আমি নিরক্ষরতামুক্ত সমাজ গড়ার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন গড়ে তুলেছি।

অন্ধদের নিয়ে কাজ করছি, শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করছি। ১৯৯৫ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতাহীন সেসময়ে দলে যোগ দান করি। তার পরপরই নানান অত্যাচারের শিকার হই আমি। তখন ম্যাডাম আমাকে ডেকে নিয়ে শহর বিএনপির দায়িত্ব দেয়। এইতো তারপর চলতে চলতে আজকে ম্যাডামের উপদেষ্টা।

যুগের চিন্তা: রাজনীতিতে কী হারিয়েছেন আর কী পেয়েছেন?

তৈমূর আলম: পেয়েছি কর্মীদের আস্থা ভালবাসা। আর হারানো অনেক, নিজের ভাইটাকে হারিয়েছি। ছোট ভাই খোরশেদকে নিয়ে জেল জুলুম অত্যাচার সহ্য করছি এখনো। পারিবারিক অর্থনৈতিক অনেক দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।  

যুগের চিন্তা:  কেন আপনাদের উপর অত্যাচার চলছে কেন?

তৈমূর আলম: একটি বিশেষ পরিবারের সঙ্গে আমরা আতাত করে রাজনীতি করি না। আওয়ামীলীগ জাতীয় পার্টির স্টেইজে গিয়ে বসে থাকি না। এটাই আমাদের অপরাধ। এই অপরাধেই ৫৩ টি মামলা খেয়েছি। প্রায় আটবার জেল খেটেছি।

যুগের চিন্তা: আপনার দোষ গুন নিয়ে বলুন।

তৈমূর আলম: যা বিশ্বাস করি তা বলি। রাজনীতিবিদ হিসেবে এটা দোষ। তার বাইরে হিসেব করে চলি। ভালদিক মানুষ বলবে। তবে হ্যা দলের প্রয়োজনে এগিয়ে যাই। পিছপা হই না।

যুগের চিন্তা: রাজনীতিতে কার প্রতি বেশি কৃতজ্ঞ?

তৈমূর আলম: বিএনপিতে খালেদা জিয়ার কাছে কৃতজ্ঞ। তার আগে আলী আহাম্মদ চুনকার প্রতি। তার সঙ্গে শ্রমিক রাজনীতি করতাম।

যুগের চিন্তা: এমন কোন অপূর্ণ ইচ্ছা আছে?

তৈমূর আলম: একটা অনেক বড় হাসপাতাল করে মরতে চাই। যেখানে গরীব মানুষ বিনা পয়সায় চিকিৎসা পাবে। তার জন্য কাজও করছি। এক মামাতো ভাইকে ডাক্তারি পড়ার জন্য বিদেশ পাঠিয়েছি।

যুগের চিন্তা: অবসর কাটে কী করে?

তৈমূর আলম: অবসরে লিখতে পছন্দ করি। বর্তমানে আমি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নিয়ে আমাদের অর্থনীতি, দৈনিক দিনকাল, ইনকিলাম ও নয়াদিগন্ত পত্রিকায়  কলাম লিখি। তাছাড়া একটা ব্যক্তিগত লাইব্রেরি আছে সেখানে পড়াশোনা করি।

যুগের চিন্তা: নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি যদি কোন আহ্বান জানাতে চান।

তৈমূর আলম: যার যার মত তাকে প্রকাশের সুযোগ দিতে হবে। অযথা যেন মিথ্যা মামলা না দেয়া হয়। সকল ভয় ভীতি উপেক্ষা করে কর্মীদের আস্থা অর্জন করে নেতৃত্ব দিতে হবে।

যুগের চিন্তা: সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। ঈদের শুভেচ্ছা নিবেন।

তৈমূর আলম: আপনাকেও ধন্যবাদ। বিএনপির পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা। 

এই বিভাগের আরো খবর