শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

এবার পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে চাই : খোরশেদ

প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০১৮  

স্টাফ রিপোর্টার (যুরে চিন্তা ২৪): আদর্শ স্কুলে শিবিরের তৎপরতা বন্ধ আর স্কুল প্রাঙ্গনে শহীদ মিনার স্থাপনের দাবীতে প্রথম আন্দোলন করতে শেখেন তিনি। তারপর জড়িয়ে পড়েন সমাজতান্ত্রিক ধারার ছাত্র রাজনীতিতে। ছাত্রদের অধিকারের আন্দোলন করতে করতে বুকের মধ্যে স্বপ্ন বুনতে থাকেন গণমানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে থাকবেন গণমানুষের পাশে। নিজের বড় ভাই এড. তৈমূর আলম খন্দকার বিএনপিতে যোগ দিলে ১৯৯৫ সালে ভাইয়ের নির্দেশে যোগদেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে। এক পা দু পা করে চলতে চলতে টানা তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে। বর্তমানে পালন করছেন মহানগর যুবদলের আহ্বায়কের দায়িত্ব । ব্যক্তি জীবনে তিন সন্তানের জনক মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ দলে পরিচিত আপোষহীন নেতা হিসেবে। যুগের চিন্তা ২৪ এর ঈদ আড্ডায় নিজের নানান অজানা গল্প শুনিয়েছেন এই কাউন্সিলর। যুগের চিন্তা ২৪ এর পাঠকদের জন্য তুলে ধারা হলো আড্ডার অংশ বিশেষ। 

যুগের চিন্তা: কেমন আছেন?

খোরশেদ: একেবারেই ভাল নেই। তারপরেও আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। রাজনৈতিকভাবেতো মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। তার মধ্যে ভাল কাজ করি আর মন্দ করি সরকারের কাছে আমরা অপরাধী হিসেবে গণ্য হই। 

যুগের চিন্তা: রাজনৈতিক পরিস্থিতিটা কেমন বুঝছেন?

খোরশেদ: স্বাধীন দেশ হওয়ার পরও বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থাকে পাকিস্তানি শাসনের সঙ্গে তুলনা করা যায়।

যুগের চিন্তা: পরিস্থিতি যেমনই হোক রাত পারহলেই পবিত্র কোরবানির ঈদ। ঈদের পরিকল্পনা কী এবার?

খোরশেদ: এবার ঈদে তেমন কোন পরিকল্পনা নেই। গত ঈদেতো কারাগারে ছিলাম পরিবারকে পাশে পাইনি। এবার অন্তত পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে চাই। আর ঈদের পর নেতাকর্মীদের সঙ্গে সময় কাটাবো।

যুগের চিন্তা:  শৈশবের ঈদের কথা মনে পড়ে?

খোরশেদ: ছোটবেলা বাবার সঙ্গে গরু কিনতে যেতাম এটাই শৈশবের স্মৃতি। আর তেমন কোন স্মৃতি নেই।

যুগের চিন্তা: ঈদে মিস করবেন এমন কেউ আছে? 

খোরশেদ: দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। তাকে অনেক বেশি মিস করবো। তিনি বাইরে থাকলে হয়তো তার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া হতো। আমার মা, বাবা, মেঝো ভাই তারা আজ বেঁচে নেই। তাদের কথাতো প্রতি ঈদেই মনে পড়ে। আর আমার ভাগিনা আছে মাহবুব। সে স্ট্রোক করে মুমূর্ষ অবস্থায় চিকিৎসাধীন। তাকে মিস করবো।

যুগের চিন্তা: অনেক কিছুইতো হতে পারতেন, রাজনীতিবিদ কেন হলেন?

খোরশেদ: আমি মানুষের জন্য কিছু করতে চেয়েছিলাম। সে ইচ্ছে থেকেই রাজনীতিতে আসা। রাজনীতি ছাড়াও মানুষের জন্য কাজ করা যায় তবে তার পরিধিটা সিমীত। কিন্তু রাজনীতির মাধ্যমে ভাল কাজ করার পরিসরটা ব্যাপক। 

যুগের চিন্তা: রাজনীতিবিদ ছাড়া শৈশবে কী হওয়ার ইচ্ছে ছিলো?

খোরশেদ: রাজনীতিবিদ না হলে হয়তো সেনাবাহিনীতে যেতাম বা সংবাদিক হতাম। 

যুগের চিন্তা: অবসরে কী করতে পছন্দ করেন? 

খোরশেদ: আমি ২৪ ঘন্টাই জনপ্রতিনিধি সে হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। তেমন অবসরের সুযোগ নেই। তবে যতটুকুই সময় থকে তখন রাজনৈতিক লেখালেখি করি। এর বাইরে কবিতাও লিখি মাঝে মধ্যে।   

যুগের চিন্তা: যুবদলের নতুন কমিটি আসছে না কেন?

খোরশেদ: সেটা আমি জানি না। কেন্দ্র ভাল বলতে পারবে। সারা বাংলাদেশে প্রায় সবগুলো কমিটি হয়ে গেলেও এখানে হচ্ছে না। এটা রহস্য জনক। আমার ধারণা এখানে যারা আগামীতে নির্বাচন করবেন তাদের স্বার্থের জন্যই এটা দখলে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।

যুগের চিন্তা: এতে আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না?

খোরশেদ: হচ্ছে, ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কমিটি না আসার কারনে এখানে কর্মীরা কখনো কখনো ভুলপথে হাটতে বাধ্য হচ্ছে। 
যুগের চিন্তা: এই যে আজকের কাউন্সিলর খোরশেদ, এ যায়গায় কেমন করে আসলেন?
খোরশেদ:  আমি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় আদর্শ স্কুলে জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলন করি। সেখানে পরোক্ষভাবে ছাত্র শিবির তৈরী করার চেষ্টা চলছিলো। আমরা তখন স্কুলে শিবিরের কার্যকম বন্ধ ও শহীদ মিনার নির্মানের দাবী জানাই। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন বর্তমান এমপি শামীম ওসমান।

আন্দোলনে যখন পুলিশি হয়রানীর চেষ্টা চলছিলো তখনই ছাত্রফ্রন্ট ছাত্র ইউনিয়নের মতো সংগঠনগুলো আমদের পাশে এসে দাঁড়ায়। তখন ছাত্রফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে পরিচয়। তাদের পরিচর্যায় ছাত্রফ্রন্টে কাজ করি কয়েকবছর। তারপর তৈমূর ভাই (খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এড. তৈমূর আলম খন্দকার) বিএনপিতে যোগ দিলে তার নির্দেশে আমি ছাত্রদলে যোগ দিই। তারপর মহানগর  জিয়া পরিষদের সহ সভাপতি হিসেবে কাজ করি। সেখান থেকে আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর কমিশনারের হাত ধরে যুবদল শুরু করি। সেখানে কাজে সন্তুষ্ট হয়ে নেতারা আমাকে মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব দেয়। রাজনীতিতে তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সেখান থেকেই আজকের এই যায়গায়। 

যুগের চিন্তা: আপনি টানা তিনবারের  কাউন্সিলর। এতো ভালবাসা কীভাবে অর্জন করলেন?

খোরশেদ: মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করে কাজ করতে পারি বলেই মানুষ আমাকে ভালবাসে। কমিশনার হিসেবে আমি সকলের, কোন দলের নই। এ কারনে দলমত নির্বিশেষে সকলেই আমাকে ভোট দেয়। আওয়ামীলীগের একটা বড় অংশও আমাকে ভাট দেয়। সারা বাংলাদেশে একটা গুঞ্জন আছে হিন্দুরা বিএনপিকে ভোট দেয় না। কিন্তু আমি জানি এখানকার ৯০ ভাগ হিন্দু আমাকে ভালবাসে।

যুগের চিন্তা: রাজনীতির এই ত্রিশ বছরে ব্যর্থতা সফলতা কোনগুলো?

খোরশেদ: রাজনীতিবিদ হিসেবে আমি সফল। মানুষের ভালবাসা মায়া দয়া পাচ্ছি এটাই আমার সফলতা। আর ব্যর্থতা হচ্ছে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। পরিবারকে সময় দিতে পারিনি। 

যুগের চিন্তা: আপনার আত্ম সমালোচনা করুন, সঙ্গে নিজের গুণটুকুও বলতে পারেন। 

খোরশেদ: পরিবারকে সময় দিতে পারি না। আর আবেগের কারনে মানুষের অনেক আবদার রাখতে গিয়ে ব্ল্যাক মিলিংয়ের শিকার হই। এই যে মানুষের জন্য নিবেদিত প্রাণ হিসেবে কাজ করতে পারি, এটাই আমার গুণ। 

যুগের চিন্তা: এমন কোন ইচ্ছা আছে যেটা পূরণ হয়নি? 

খোরশেদ: প্যানেল মেয়র হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নিজদলের ষড়যন্ত্র আর মুরুব্বিদের বেঈমানীর কারনে সেটা হতে পারিনি।
যুগের চিন্তা: রাজনীতিতে এমন কেউ আছেন যার প্রতি সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ?

খোরশেদ: আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর কমিশনার। তার কাছেই শিখেছি কেমন করে ঘরে ঘরে গিয়ে সংগঠন গড়ে তুলতে হয়। তার কাছেই সাহসী হতে শিখেছি, সময় জ্ঞান শিখেছি। আজকের খোরশেদ হওয়ার পেছনে ওনার অবদান অনেক। কিন্তু তাকে শেষ দেখাটাও দেখতে পারিনি এই কষ্টটা আজীবন থাকবে।
যুগের চিন্তা: রাজনীতি করতে গিয়ে নিশ্চই জেলে যেতে হয়েছে। মামলা, জেল এসব নিয়ে বলুন। 

খোরশেদ: এ পর্যন্ত চারবার প্রেপ্তার হয়েছি। এবারই তিনমাস ২৬ দিন সর্বোচ্চ কারাভোগ করতে হলো। এবারতো আমাকে ক্রসফায়ারে দেয়ার হুমকী দিয়ে চোখ বাধা হয়েছিলো। তার আগে এতোটা কষ্ট হয়নি। এবার কারাগারে থাকা অবস্থায় আমার পরিবার আর যুবদল নেতাকর্মীদের বাইরে কেউ কোন প্রতিবাদ করেনি আমাকে দেখতেও যায়নি। শুধুমাত্র কাউন্সিলর সাদরিল ( নাসিক ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ) ঈদে আমার জন্য একটা পাঞ্জাবি পাঠিয়েছিলো সেজন্য তার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।

যুগের চিন্তা: অসংখ্য ধন্যবাদ সময় দেয়ার জন্য। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ঈদ শুভেচ্ছায় যদি কিছু বলতে চান। 
খোরশেদ: যুগের চিন্তাকে ধন্যবাদ। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলবো ধৈর্য্য ধরুন। আগামীতে মানুষের মুক্তির যে লড়াই সে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিন। আমরাই জিতবো। সকলকে মহানগর যুবদলের পক্ষ থেকে ঈদ শুভেচ্ছা। 
 

এই বিভাগের আরো খবর