শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

দাম যেই শুনেছে সেই বলছে ‘ভাই ঠকছেন’: মোরছালীন বাবলা

প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০১৮  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : ঈদ মানেই অন্য রকম এক মিলন মেলা। শত ব্যস্ততার মাঝে ঈদ উৎসবের কমতি নেই। ঈদের আমেজ অন্যান্য কাজ এখন নিতান্ত গৌণ। কোরাবনির হাটগুলোতে, রাস্তাঘাটে কিংবা বাড়িতে ঈদের জৌলুশ চোখে পড়ে। সবাই ঈদ উৎসব সম্পর্কে অবগত। আর মাত্র কয়েক ঘন্টা। তারপরই মুসলমানধর্মাবলম্বীদের অন্যতম উৎসব ঈদুল আজহার উদযাপন শুরু। আর এই ঈদুল আজহা উদযাপন নিয়ে যুগের চিন্তা ২৪’কে  দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কিছু কথা বলেছেন ‘চ্যানেল আই’ এর বিশেষ প্রতিনিধি ও দৈনিক যুগের চিন্তার পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক আবু আল মোরছালীন বাবলা। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন শামীমা রীতা


এবারের ঈদুল আজহা উদযাপন নিয়ে আবু আল মোরছালিন বাবলা জানান, প্রতিবারের মত এবারো নারায়ণগঞ্জের বাড়িতেই মা-বাবা,ভাই-বোন ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে উদ উদযাপন করবেন তিনি।


ঈদুল আজহায় সারাদিন  ব্যস্ততাতেই কাটে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন সকাল বেলা  ঈদেও নামাজ পড়তো। তারপর গরু কোরবানি দিবে সেখানে থাকবো। এরপর গরু কাটা,মাংস বিলি সবমিলিয়ে ঈদের দিন এ ব্যস্ততার মধ্যে দিয়েই কেটে যাবে।’


কোরবানির ঈদের গরু কেনা ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে জানান  মোরছালীন বাবলা। তিনি বলেন, গাজীপুরের এক হাট থেকে এবার কোরবানির গরু কেনা হযেছে।


ঈদুল আজহায় শৈশবের স্মৃতিচারণ করে মোরছালীন বাবলা বলেন, ‘ছোটবেলা সবচেয়ে বেশি আগ্রহ থাকতো কোরাবনি ঈদ নিয়েই। কোরবানি ঈদ আসলেই মাথায় ঘুরপাক করতো কবে ঈদের গরু কিনবো! কখন হাঁটে যাব! আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগতো তখন যখন হাঁট থেকে গরু কিনে রশি টেনে টেনে বাড়ি নিয়ে আসার সময়। মানুষ দাম জিজ্ঞাস করতো ভাই কত! ভাই কত! তাছাড়া তখন বন্ধুবান্ধব ছিলো, ঘুরতাম, হাটে যেতাম। সবমিলিয়ে অনেক আনন্দ করতাম। এখন তো বড় হয়ে গেছি।  ঈদের আনন্দটা সেভাবে অনুভূত হয় না। এখন ছেলে মেয়েরা আনন্দ করে।


ঈদুল আজহার এক ঈদে গরুর কেনার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ছোটবেলার ঈদ আনন্দ সবসময়ই আলাদা। তবে ঈদুল আজহায় গরু কেনা নিয়ে আমরা একটা ঘটনা মনে পড়ে। সে  ঘটনা মনে হলে আমি এখনও হাসি। মূলত প্রতিবছর ঈদের গরু  বাবাই কিনে। তো আমি ঐ ঈদে জেদ ধরলাম আমিই গরু কিনবো। তখন আমি ছোট না, বেশ বড়ই হয়েছি। তো বাবাকে বললাম ‘তুমি প্রতিবার বেশি দাম দিয়ে আগে আগে গরু কিনো। এবার আমি ঈদের আগের দিন পানির দামে গরু কিনবো।’ আমার ধারণা ছিলো ঈদের আগের দিন মানে চাঁদ রাতে হয়তো কম দামে গরু কেনা যায়। তো যেই কথা সেই কাজ। ঈদের আগের দিন গেলাম গরু কিনতে। কিন্তু গিয়ে দেখি  কোরবানির হাটে কোথাও গরু নেই।  একবার ঢাকা ঘুরছি তো আরেকবার নারায়ণগঞ্জ আসছি কিন্তু কোথাও গরু নেই। মনটা খুব খারাপ। এবার  কি  গরু কেনা হবে না! বাসায়ও জানালাম। তো যাই হোক রাতের দিকে সন্ধান পেলাম ৫নং ঘাটে একটা লোক চারটা গরু নিয়ে আসছে। গেলাম তিনজন মিলে। তিনজনে চারটা গরু কিনলাম। আমার ভাগে পড়লো সবচেয়ে ছোট গরু, মানে বাছুর। ঐ সময়ে এ বাছুরের দাম পড়লো  ১৪ হাজার টাকা। যে গরুর দাম ছিলো ৬-৭ হাজার টাকা। তো  রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছি । সবাই দাম জিজ্ঞাস করছে কত? আমি দাম বলছি।  দাম যেই শুনছে সেই বলছে ‘ ভাই ঠকছেন’। বেশ লজ্জায় পড়ছি। এভাবে তো আর চলে না। তো পরে যখন আরেকজন জিজ্ঞাস করলো ‘ভাই কত?’ দাম বললাম ৬ হাজার টাকা।  তখন সবাই বলতেছে কোথা থেকে কিনলেন? ভাই জিতছেন তো! (হাসি)।  তো আমার গরু কেনার অভিজ্ঞতাটা ছিল এরকম।


ঈদুল আজহার কোরবানি থেকে  শিক্ষণীয় বিষয় অনেক উল্লেখ করে আবু আল মোরছালীন বাবলা বলেন, ‘কোরবানি করার মূল উদ্দেশ্যে, আল্লাহর নামে ত্যাগ স্বীকার করে। অর্থ্যাৎ ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হওয়া। কিন্তু আমার কাছে একটা বিষয় বেশ কষ্টদায়ক লাগে, আমরা ঠিকই কোরবানি করতেছি কিন্তু মাংসগুলো যাদের দেয়া (গরীব-দুঃখি) একান্ত জরুরী, তাদের দিতে পারছিনা। দেখা যাচ্ছে আমরা যাদের দিচ্ছি তারা মাংসগুলো নিয়ে বিকেলের পর মাংসগুলো মোড়ে মোড়ে  নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেয়। এ মাংসগুলো আবার নিয়ে যায় হোটেল ব্যবসীরা।  আমরা কাছে সবসময় মনে হয় যদি কোরাবনির মাংসগুলো সুবিধাবঞ্চিত এলাকাগুলোতে বা আসলেই যারা গরীব বছরের কোনোদিন এক টুকরো মাংস খাওয়ার সুযোগ হয় না তাঁদেরকে যদি দিতে পারতাম! তাহলে তারা হয়তো একবেলা তৃপ্তি করে খেতে পারতো! কিন্তু তা হচ্ছে না! আমরা কোরবানির যে তাৎপর্য বা শিক্ষা তা আমরা সঠিকভাবে অনুসরণ করছি না। তাই আমাদের সকলেরই উচিত কোন প্রকার প্রতিযোগিতায় না গিয়ে গরী-দুঃস্থদের সহযোগিতায়, নিজেদের আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি দেয়া।’


যুগের চিন্তা পরিবারের সকল সদস্য, যুগের চিন্তার পাঠক, শুভাকাঙ্খী, শুভানুধ্যায়ীসহ নারায়ণগঞ্জবাসীকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে আবু আল  মোরছালীন বাবলা বলেন, ‘সবাই  প্রত্যেকের পরিবার নিয়ে সুন্দরভাবে ঈদ উদযাপন করুক, সবার ঈদ আনন্দে কাটুক এই কামনা করি। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।’
 

এই বিভাগের আরো খবর