Logo
Logo
×

ফিচার

বেকারত্ব বেড়েই চলছে, কার্যকর সমাধান কি অধরাই থাকছে?

Icon

কাজী খলিলুর রহমান

প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২৫, ০৩:০৭ পিএম

বেকারত্ব বেড়েই চলছে, কার্যকর সমাধান কি অধরাই থাকছে?

দেশে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশে পরিসংখ্যানভেদে প্রায় ২০ লাখ তরুণ প্রতিবছর কর্মবাজারে প্রবেশযোগ্যতা লাভ করেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই কাজ পান না, অনেকে পেলেও যোগ্য কাজটি পান না কিংবা অনেকেরই আকাঙ্ক্ষিত পারিশ্রমিক মেলে না। বিনিয়োগ-কর্মসংস্থান আর দারিদ্র্য বিমোচন যেহেতু একই সূত্রে গাঁথা, তাই এখানে ক্রমাগত বিনিয়োগও প্রণিধানযোগ্য ভূমিকা পালন করে। 

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে, বিশেষত ব্যবসা-বাণিজ্যে নানা সংকট চলছে। ডলার–সংকট ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তাঁদের ওপর আর্থিক চাপ বেড়েছে। উল্লেখযোগ্য হারে ঋণ ও বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি হয়নি। বিদেশি বিনিয়োগও খুব বেশি বাড়ছে না। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কর্মসংস্থানের ওপর, সেভাবে নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে না। যদিও প্রতিবছর কর্মক্ষম বিপুলসংখ্যক মানুষ চাকরির বাজারে যুক্ত হচ্ছেন। তাঁদের একটি বড় অংশই কাজ না পেয়ে বেকার থাকছেন। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সম্প্রতি প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ও শ্রমবাজার নিয়ে নতুন করে ভাবনার অবকাশ তৈরি করেছে। জরিপ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ দেশে মোট বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজারে, যা আগের বছরের তুলনায় ৬০ হাজার বেশি। ২০২৩ সালে যেখানে এই সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৫০ হাজার, ২০২৪ সালে তা বেড়ে ২৬ লাখ ১০ হাজারে পৌঁছেছে। বেকারত্বের হারও বেড়েছে-২০২৩ সালে ছিল ৪.১৫ শতাংশ, যা ২০২৪ সালে বেড়ে হয়েছে ৪.৪৮ শতাংশ। 

এই পরিসংখ্যান শুধু একটি সংখ্যা নয়, এটি একটি জাতির অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য, সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার প্রতিবিম্ব। বেকারত্ব বৃদ্ধি যে শুধু ব্যক্তি ও পরিবারিক দিক থেকে সমস্যা তৈরি করে তা নয়, বরং এটি সামগ্রিকভাবে দেশের উৎপাদনশীলতা, সামাজিক নিরাপত্তা এবং জাতীয় উন্নয়নের পথকে প্রতিনিয়ত বাধাগ্রস্ত করে। বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের শ্রমশক্তির একটি বড় অংশ তরুণ ও শিক্ষিত। প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা শেষে কর্মসংস্থানের প্রত্যাশা নিয়ে শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। কিন্তু সেই তুলনায় নতুন চাকরির সৃষ্টি হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বাজারের চাহিদার মধ্যে রয়েছে একটি বিস্তর ফারাক। ফলে একজন স্নাতকধারীকেও অনেক সময় খুঁজতে হচ্ছে নিম্নমানের বা অস্থায়ী পেশা, যা তার দক্ষতা ও যোগ্যতার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে না। 

এছাড়া, বেসরকারি খাত-যাকে দেশের কর্মসংস্থানের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়-সেখানে বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের গতি প্রত্যাশিত মাত্রায় বাড়ছে না। উদ্যোক্তা হতে আগ্রহীদের পথেও রয়েছে নানান প্রতিবন্ধকতা-প্রণোদনার ঘাটতি, ব্যাংকঋণের জটিলতা, বাজারে প্রবেশের প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদি। অন্যদিকে, প্রবাসী শ্রমবাজারে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রেও নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যার ফলে বিদেশে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও অনেক ক্ষেত্রে অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারের নীতিনির্ধারকদের উচিত হবে একাধিক সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও দক্ষতামুখী ও বাজারমুখী করতে হবে। পলিটেকনিক, কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং এগুলোর মানোন্নয়ন জরুরি। 

উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ, প্রশিক্ষণ এবং বাজারে প্রবেশের সুযোগ তৈরি করতে হবে। এছাড়াও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতকে আরও গতিশীল করতে হবে, যাতে গ্রামীণ ও মফস্বল পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি, তথ্যপ্রযুক্তি খাত, পরিবেশবান্ধব শিল্প এবং রপ্তানিমুখী খাতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ বাড়ানো সময়ের দাবি। বেকারত্ব শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকেও একটি গুরুতর সমস্যা। দীর্ঘমেয়াদি বেকারত্ব তরুণদের মধ্যে হতাশা, অপরাধপ্রবণতা ও উগ্রবাদে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা তৈরি করতে পারে, যা একটি জাতির জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। তাই এখনই সময়, কর্মসংস্থানকে জাতীয় অগ্রাধিকার ঘোষণা করে সব মন্ত্রণালয় ও খাতকে সমন্বিতভাবে এগিয়ে নেওয়া।

এ জন্য অন্যতম সম্ভাবনাময় হতে পারে বৃহত্তর কৃষি খাত—খামার ও অখামারি কৃষি খাত। একসময় জিডিপিতে কৃষির অবদান ছিল বেশি। দেশের শ্রমশক্তিও ছিল কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু গত অর্ধশতকে দেশের অর্থনীতির কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। কৃষিনির্ভরতা কাটিয়ে শিল্পের দিকে এগিয়েছে দেশ। জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান কৃষিকে ছাড়িয়ে গেলেও তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না শ্রমবাজারে। এ পরিস্থিতিতে কৃষিতে আধুনিকায়ন, যথাযথ প্রশিক্ষণ ও উচ্চমূল্যের কৃষিপণ্য উৎপাদনের সুযোগ থাকলে এ খাতে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে। 


লেখক

কাজী খলিলুর রহমান

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন