
প্রিন্ট: ২৩ জুন ২০২৫, ০৬:৩৪ পিএম
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু করণীয়

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২৫, ০২:১৩ পিএম

ছবি-সংগৃহীত
রক্তচাপ একজন মানুষের স্বাস্থ্যগত অবস্থা সম্পর্কে অনেক কিছু বলে দিতে পারে। শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কতটুকু সুস্থ আছে তা বোঝার উৎকৃষ্ট উপায় হলো রক্তচাপ স্বাভাবিক আছে কি না তা পরীক্ষা করা।”
যুক্তরাষ্ট্রের পালোমা হেল্থ’য়ের সনদস্বীকৃত নার্স জুলিয়া ওয়াকার ‘ইট দিস’ ওয়েবসাইটের এক প্রতিবেদনে বলেন, “রক্তনালীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া এর দেয়ালে রক্ত কতটুকু চাপ প্রয়োগ করছে সেটাই হলো রক্তচাপ। হৃদযন্ত্রই এই চাপ তৈরি করে, তবে রক্তনালী কতটুকু স্বাস্থ্যবান বা সরু হয়ে গেছে কি-না সেটার ওপরও রক্তচাপ নির্ভরশীল। আর যে অঙ্গগুলো সেই রক্ত গ্রহণ করছে সেগুলোর সুস্বাস্থ্যও রক্তচাপের ওপর প্রভাব ফেলে। তাই শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কতটুকু সুস্থ আছে তা বোঝার এই উৎকৃষ্ট উপায় হলো রক্তচাপ স্বাভাবিক আছে কি না তা পরীক্ষা করা।”
তিনি আরও বলেন, “রক্তচাপ মাপতে দুটি পরিমাপ জানতে হয়। সিস্টোলিক ব্লাড প্রেসার হল সেই চাপ তা হৃদযন্ত্র রক্ত ‘পাম্প’ করার সময় সৃষ্টি হয়। অপর পরিমাপটি হল ‘ডায়াস্টোলিক ব্লাড প্রেশার’, যা প্রবাহিত হওয়ার রক্তনালীর দেয়ালে পড়া রক্তের চাপের পরিমাপ। ‘সিস্টোলিক ব্লাড প্রেশার’ ৯০–১২০ এর মধ্যে থাকলে তা স্বাভাবিক, আর ‘ডায়াস্টোলিক ব্লাড প্রেশার থাকতে হবে ৬০ – ৮০ এর মধ্যে।”
উচ্চ রক্তচাপের কারণ
ওয়াকার বলেন, “রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার নানান কারণ থাকতে পারে। ক্ষণিকের জন্য রক্তচাপ বৃদ্ধি ভয়ের কিছু নয়। প্রয়োজনে বাড়তি কর্মশক্তি যোগানোর জন্য এই রক্তচাপ বৃদ্ধি হয়। তবে লম্বা সময় রক্তচাপ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকলেই সমস্যা। কারণ এতে রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ক্ষতি হয় অন্যান্য অঙ্গেরও। অতিরিক্ত মানসিক চাপ, অলসতা, বংশগত কারণ, দূরারোগ্য ব্যাধি, অতিরিক্ত ধূপমান ও মদ্যপান, স্থূলতা, কোলেস্টেরল, চর্বি, সোডিয়াম বেশি ইত্যাদি উচ্চ রক্তচাপের প্রধান কারণ।”
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
“যে বিষয়গুলোর কারণে রক্তচাপ বাড়ছে সেগুলোকে দৈনন্দিন জীবনযাত্রা থেকে কমিয়ে ফেলাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মূলমন্ত্র”, বলছিলেন ওয়াকার।
তিনি আরও বলেন, “এর মধ্যে কিছু বিষয় মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যেমন- বয়স, জিনগত সমস্যা। তবে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম ও ব্যায়াম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব অনেকাংশে।”
ক্যাফেইন থেকে সাবধান
ওয়াকার বলেন, “যাদের রক্তচাপের সমস্যা নেই, তারাও কফি পান করলে রক্তচাপ বাড়ে সামান্য সময়ের জন্য। কফি ‘অ্যাড্রেনালিন’ নিঃসরণ বাড়ায়, রক্তনালীকে প্রসারিত হতে বাধা দেয় এমন অনেক কারণ চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। যারা মাঝেমধ্যে পান করেন তাদের তুলনায় যারা প্রতিদিন কফি পান করেন তাদের রক্তচাপ একটু বেশি হতে দেখা যায়। কফি পান করার কারণে রক্তচাপ বাড়ছে কি না বা কতটুকু বাড়ছে তা বুঝতে কফি পান করার আগে ও পরে রক্তচাপ মেপে দেখতে পারেন। কফি পানের আধা ঘণ্টা থেকে দুই ঘণ্টা পর প্রেশার মাপতে হবে।”
মানসিক চাপ
প্রতিনিয়ত মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে রক্তচাপ বাড়বে। শারীরিক, মানসিক, আবেগ যেকোনো দিক থেকে মানুষ যখন চাপে থাকে তখন ‘অ্যাড্রেনাল’ গ্রন্থিগুলো নিঃসরণ করে কর্টিসল হরমোন, যা রক্তনালীর স্থিতিস্থাপকতা কমায়। দিনের ব্যস্ততা কমাতে হবে, মানসিক অবস্থার দিকে যত্নবান হতে হবে। তবেই কমবে ‘কর্টিসল’, নিয়ন্ত্রণে থাকবে রক্তচাপ।”
শরীরচর্চা
ওয়াকার বলেন, “ব্যায়াম শুধু পেশিকে শক্তিশালী করে তা নয়, শরীরের প্রতি অঙ্গের জন্যই তা জরুরি। এর মধ্যে হৃদযন্ত্র সবচাইতে বেশি উপকৃত হয়। কারণ শারীরিক কসরতের সময় হৃদযন্ত্র বেশি রক্ত ‘পাম্প’ করে, যাতে হৃদযন্ত্রকে কাজ করতে হয় কম। হৃদযন্ত্র আরামে থাকলে রক্তনালীর ওপরেও চাপ কমবে। আর শরীরচর্চার অন্যান্য উপকারিতা তো আছেই।”