
প্রিন্ট: ২৯ আগস্ট ২০২৫, ০৪:০৭ এএম
অর্থনৈতিক উন্নয়নে সংবাদপত্রের ভূমিকা

আলিমুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৪:২৩ পিএম

অর্থনৈতিক অগ্রগতির পেছনে শুধু উন্নত অবকাঠামো নয়, দরকার সঠিক তথ্য, সচেতনতা এবং স্বচ্ছ নীতিনির্ধারণ। এই ক্ষেত্রগুলোতে সংবাদপত্র এক নিঃশব্দ অথচ দৃঢ় ভূমিকা পালন করে থাকে। একটি স্বাধীন সংবাদমাধ্যম শুধু খবর প্রচার করে না, বরং অর্থনৈতিক সংস্কার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের ভিত গড়ে তোলে।
অর্থনৈতিক তথ্যের সহজলভ্যতা অর্থনীতির জন্য অক্সিজেনের মতো। বিশ্বে প্রায় সব সংবাদপত্র বা All Bangla Newspaper জনগণের মধ্যে শেয়ার বাজার, কৃষি উৎপাদন, দ্রব্যমূল্যের ওঠানামা কিংবা সরকারি বিনিয়োগ প্রকল্পসহ নানান বিষয় বিস্তারিতভাবে অবহিত করে। এই তথ্যভিত্তিক জ্ঞান একজন সাধারণ ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে উচ্চপর্যায়ের বিনিয়োগকারী পর্যন্ত সবাইকে সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
সংবাদপত্র সরকারি বাজেট, নীতিমালা ও উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে বিশ্লেষণ প্রকাশ করে জনসচেতনতা তৈরি করে। এর ফলে জনগণ শুধু তথ্যভিত্তিক মতামত গঠনই করতে পারে না, বরং অর্থনীতির অংশীদার হয়ে ওঠে। জনগণের এই অংশগ্রহণই একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের দিকচিহ্ন।
সংবাদপত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো নীতিনির্ধারকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা। বিভিন্ন রিপোর্ট ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে সংবাদমাধ্যম সরকারি ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে এবং দুর্নীতি কিংবা অপচয়ের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলে। একটি সুশাসিত অর্থনীতি গঠনে এই নজরদারি অত্যন্ত কার্যকর।
এছাড়া সংবাদপত্র দেশের পজিটিভ ব্র্যান্ডিংয়ে অবদান রাখে। একটি দেশ যখন স্বচ্ছ ও স্বাধীনভাবে গণমাধ্যমে অর্থনৈতিক গতিশীলতা তুলে ধরতে সক্ষম হয়, তখন বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও নিরাপদ মনে করে বিনিয়োগ করতে। সেই সঙ্গে বৈদেশিক সহযোগিতা ও ঋণের ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আস্থা বাড়ে।
অর্থনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রেও সংবাদপত্র বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে। উদাহরণস্বরূপ, ব্যাংকিং খাতের অব্যবস্থাপনা, ট্যাক্স প্রশাসনের জটিলতা কিংবা কৃষি উপকরণের ঘাটতির মতো বিষয়গুলো সংবাদপত্রে প্রকাশিত হলে সরকার সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। জনদাবি ও বাস্তব পরিস্থিতির প্রতিফলন থাকায় এসব রিপোর্ট উন্নয়নের চালিকাশক্তি হয়ে ওঠে।
স্বাধীন গণমাধ্যমের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বহু গবেষণা হয়েছে। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন যেমন বলেন, ‘যেখানে সংবাদমাধ্যম স্বাধীন, সেখানে দুর্ভিক্ষ হয় না।’ কারণ, দুর্যোগ ও সংকটের সময় সংবাদপত্র সত্য ও তাজা তথ্য পৌঁছে দিতে পারে, যার ভিত্তিতে ত্রাণ, সহযোগিতা এবং পরিকল্পনা নির্ভুলভাবে নেওয়া সম্ভব হয়।
লেখক,
আলিমুল ইসলাম
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়