
প্রিন্ট: ২২ জুন ২০২৫, ১০:৩৮ পিএম
টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে রামগতি-কমলনগরের ২০ গ্রাম

লক্ষ্মীপুর প্রতিবেদক:
প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৫, ০৫:৪২ পিএম

ছবি - যুগের চিন্তা
গত তিন দিনের টানা বৃষ্টি ও মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপকূলীয় এলাকার ২০ গ্রাম। তীব্র জোয়ারে কয়েকটি সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতে করে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে।পাশাপাশি মাতাব্বরহাট এলাকায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। হুমকির মুখে পড়ছে রাস্তা-ঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শত শত বাড়িঘর।
এছাড়া বুধবার গভীর রাত থেকে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে দুটি উপজেলা। এখন পর্যন্ত রামগতি ও কমলনগর উপজেলার কোথাও বিদ্যুৎ নেই। সম্পূর্ণ অন্ধকারে রয়েছে এ দুই উপজেলার সাড়ে ৭ লাখ মানুষ। দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইলের নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট অচল হয়ে পড়েছে।
বিশেষ করে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উকূলীয় এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। তবে নদীতে ভাটা পড়লে পানি কিছুটা নামলেও আবার জোয়ার আসলে একই অবস্থায় তৈরি হয়। গত তিন দিন ধরে একইভাবে পানি ওঠা-নামা করছে। উত্তাল রয়েছে মেঘনা নদী।
এছাড়া কমলনগর উপজেলার চরকালকিনি, সাহেবেরহাট, পাটওয়ারীরহাট, চরফলকন, চরমার্টিন, চরলরেঞ্চ ইউনিয়ন এবং রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার, বড়খেরী, চরগাজী, চরআবদুল্লাহ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২০টি এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। জোয়ারের পানিতে রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি, ফসলি জমি, নীচু ঘরের ভিটি তলিয়ে যায়। তলিয়ে গেছে চর ফলকন উচ্চ বিদ্যালয় সহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে শুক্রবার সকাল থেকে হালকা, মাঝারি, ভারী বা গুড়িগুড়ি বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে।
অন্যদিকে, কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন এলাকায় রাস্তা ভেঙে গিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে বলে জানান স্থানীয়রা। এছাড়া ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩১ কিলোমিটার তীর রক্ষাবাধেঁর কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু উত্তাল ঢেউয়ে বেড়িবাঁধের মাতাব্বরহাট এলাকায় প্রায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। যে কোনো সময় ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়তে পারে বাঁধটি।
স্থানীয়রা জানান, টানা বৃষ্টি ও মেঘনার জোয়ারে পানি প্লাবিত হওয়ায় দুর্ভোগ এবং ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন। দুই শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। হাঁস-মুরগি এবং গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। গৃহস্থালির রান্নার কাজেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। নদীর তীররক্ষা বাঁধের কাজ চলছে। কিন্তু কাজ এখনও শেষ হয়নি। ফলে জোয়ারের পানি বাড়লে উপকূল তলিয়ে যায়। এতে ফসলসহ বসতবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। তাই দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ সমাপ্ত করার দাবি তারা।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ-জামান বলেন, টানা বৃষ্টি ও মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানির প্রভাবে বাঁধের কাজের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে কোথাও বাঁধের কোনো ভাঙন ও সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহাত উজ জামান বলেন, মাতাব্বর হাট, পাটারির হাট, ফলকন, চরমার্টিন, চর লরেন্স, তোরাবগঞ্জ, কালকিনি ইউনিয়নের বেশ কিছু অংশ ঘুরে দেখেছি। বেশ কিছু এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। সকলকে সাবধান ও সচেতন থাকতে তিনি অনুরোধ করেছেন
জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার বলেন, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকানো খাবার মজুদ রয়েছে। অপরদিকে টানা বৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে উপকূলীয় এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলেও মেঘনায় ভাটায় পানি নেমে যায়। তবে বন্যার আশঙ্কা এখনও করা হচ্ছে না। তারপরও প্রশাসনের সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।