
প্রিন্ট: ২৪ জুন ২০২৫, ১২:৫২ এএম
ইরান-ইসরায়েলের এত শত্রুতার কারণ কী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৫, ০৮:৩২ পিএম

ছবি-সংগৃহীত
গত কয়েক দশক ধরেই ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে বৈরি সম্পর্ক বিরাজ করছে। ইসরায়েলকে ‘শত্রু রাষ্ট্র' মনে করা ইরান দেশটিকে মানচিত্র থেকে মুছে দিতে চায়। পিছিয়ে নেই ইসরায়েলও। ইরানকে এই অঞ্চলে নিজেদের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ বলে বিবেচনা করে ইসরায়েল। কিন্তু এই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক কি সবসময়ই এমন বৈরি ছিল? দুই দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস অবশ্য ভিন্ন ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ইরান-ইসরায়েল যখন পরস্পরের বন্ধু
১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামিক বিপ্লবের আগ পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। যেমন, ১৯৪৮ সালে যখন ইসয়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন দেশটিকে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল ইরান। প্রতিষ্ঠার ওই সময়ে আরব রাষ্ট্রগুলোর সাথে বৈরিতায় টিকে থাকতে ইরানকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে ইসরায়েল। একইভাবে আরব রাষ্ট্রগুলোর সাথে ইসরায়েলকে সাথে নিয়ে বৈরিতা মোকাবিলা করতে চায় ইরান।
মজার বিষয় হলো, সেই সময় বর্তমানে প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুইদেশের সেসময়ের সম্পর্ক ছিল বেশ ঘনিষ্ঠ। যেমন ইরানে কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করতো ইসরায়েল। তাছাড়া ইরানের আর্মড ফোর্স গঠনে প্রযুক্তিগত জ্ঞানের প্রসারেও সহায়তা করতো ইসরায়েল। এর বিনিময়ে নতুন জন্ম নেওয়া রাষ্ট্রটিকে জ্বালানি সহায়তা দেয় ইরান।
শুধু তাই নয়, ইসরায়েলের বাইরে ইরানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক ইহুদি বসবাস করতেন। তবে ইসলামিক বিপ্লবের পর ইহুদিদের একটি বড় অংশ ইরান ত্যাগ করে। বর্তমানে ইরানে বসবাসরত ইহুদিদের সংখ্যা ২০ হাজারেরও বেশি।
সম্পর্কের পরিবর্তন
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে আয়াতউল্লাহ রুহোল্লা খোমেনি ক্ষমতায় আসার পর ইসরায়েলের সঙ্গে আগের সব চুক্তি বাতিল করে ইরান। ক্ষমতায় এসে ‘ফিলিস্তিন ভূখণ্ড দখলের' জন্য ইসরায়েলের তীব্র সমালোচনা করেন খোমেনি।
এরপর ধীরে ধীরে ইসরায়েলের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে যেতে থাকে ইরান। এর লক্ষ্য ছিল আরব রাষ্ট্রগুলোর, কিংবা রাষ্ট্রগুলোর জনগণের সমর্থন আদায় করা। তাছাড়া এই অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে আগ্রহী ছিল ইরান।
১৯৮২ সালে ইসরায়েল যখন লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে চলমান গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে, ইরানের খোমেনি সরকার লেবাননের রাজধানী বৈরুতে শিয়া মিলিশিয়াদের সমর্থনে ইরানিয়ান রেভোলিউশনারি গার্ড সদস্যদের প্রেরণ করে। এই সমর্থনের মাধ্যমে তৈরি হয় হিজবুল্লাহ। হিজবুল্লাহ মিলিশিয়ার সদস্যরা বর্তমানে লেবাননে ইরানের ‘প্রক্সি' হিসেবে পরিচিত।
ইরানের বর্তমান নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি পূর্বসূরীদের মতোই ইসরায়েলবিরোধী। উল্লেখ্য, খামেনি এবং ইরান সরকারের পুরো নেতৃত্ব জার্মানিতে হওয়া হলোকাস্টকে অস্বীকার করে এমন অভিযোগ রয়েছে।
ইরান কি অবস্থান পরিবর্তন করবে ?
ইসরায়েলের বিষয়ে ইরান সরকারের অবস্থান যে দেশটির সাধারণ জনগণের সবাই সমর্থন করেন বিষয়টি এমন নয়। ২০২১ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আলি আকবর হাশেমি রাফজানির মেয়ে ফায়েজেহ হাশেমি রাফসানজানি বলেন, ‘ইরানকে অবশ্যই ইসরায়েলের সাথে তাদের সম্পর্ককে পুনর্বিবেচনা করতে হবে, কারণ, এই সম্পর্ক সময়ের সাথে মানানসই নয়।’
এদিকে ২০২২ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাজনীতি বিজ্ঞানী সাদেগ জিবাকালম বলেন,‘এই অবস্থান আন্তর্জাতিক বিশ্বে ইরানকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে।’
অবশ্য ইরানের বর্তমান সরকারের অবস্থানের সমর্থকও কম নয়। বিশ্লেষক আলি ফাথোল্লাহ-নেজাদের ২০২৪ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ইরান সরকারের অনেক সমর্থক এবং এক্সিস অব রেজিসট্যান্সের সদস্যরা ইরান কেন গাজায় ইসরায়েলের হামলা, কিংবা ইরানে ইসরায়েলের হামলার জবাবে ইসরায়েলে পালটা হামলা চালাতে বিলম্ব করছে, তা নিয়ে বিরক্ত।’
বার্লিনভিত্তিক সেন্টার ফর মিডল ইস্ট অ্যান্ড গ্লোবাল অর্ডার থিঙ্কট্যাংকের এই গবেষক আরও বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের আন্দোলনের মূল রক্ষাকর্তা হিসেবে বিশ্বাসযোগ্যতা কমে আসার কারণে এবং সরাসরি ইসরায়েলের মুখোমুখি হতে দ্বিধার কারণে ইরানের প্রতি নৈরাশ্য (দেশের ভেতরে) বাড়ছে।’ সূত্র: ডয়েচে ভেলে