
প্রিন্ট: ২৪ জুন ২০২৫, ০১:০৬ এএম
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে একদিনে রেকর্ডসংখ্যক অভিবাসীর যুক্তরাজ্যে প্রবেশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ০১:২৯ এএম

ছবি : সংগৃহীত
ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করে মাত্র একদিনেই রেকর্ডসংখ্যক অনিয়মিত অভিবাসী যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন। স্থানীয় সময় শনিবার, ছোট নৌকায় করে ফ্রান্সের উপকূল থেকে ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে মোট ১,১৯৪ জন অভিবাসী ব্রিটিশ ভূখণ্ডে প্রবেশ করেন। চলতি বছরে এটি একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রবেশের ঘটনা।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত সাগরপথে যুক্তরাজ্যে প্রবেশকারী অভিবাসীর সংখ্যা ১৪,৮০৮ জনে পৌঁছেছে। যদিও যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স সরকার যৌথভাবে মানবপাচার রোধে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তবে চ্যানেলপথে এই প্রবণতা থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরে সংখ্যাটি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
ফরাসি উপকূলে পুলিশের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ছবিগুলোতে দেখা যায়, পুলিশের সদস্যরা সৈকতে অভিবাসীদের নৌকা ছাড়ার সময় উপস্থিত থাকলেও কোনো প্রতিরোধ করেননি। ব্রিটেনে এই ঘটনায় রক্ষণশীল রাজনীতিক ও গণমাধ্যম তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
ফরাসি কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, সমুদ্র আইন অনুযায়ী তারা তখনই হস্তক্ষেপ করতে পারে, যখন নৌকাগুলো পানিতে থাকে এবং যাত্রীদের জীবন ঝুঁকিতে থাকে।
ব্রিটিশ কনজারভেটিভ দলের এমপি ও অভিবাসনবিষয়ক মুখপাত্র ক্রিস ফিলিপ ঘটনাটিকে ‘‘জাতীয় লজ্জা’’ হিসেবে অভিহিত করেন। রিফর্ম ইউকে দলের নেতা নাইজেল ফারাজ আরও কঠোর ভাষায় প্রতিক্রিয়া দিয়ে বলেন, “আমাদের দেশ আজ চরম হুমকির মুখে।”
লেবার দলের প্রতিরক্ষাবিষয়ক মুখপাত্র জন হিলি স্কাই নিউজকে জানান, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মধ্যে একটি চুক্তি রয়েছে, যার আওতায় ফরাসি বাহিনীকে মানবপাচার ঠেকাতে কৌশলগত পরিবর্তন আনতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, “এখন সময় এসেছে চুক্তি বাস্তবায়নে চাপ প্রয়োগের।”
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে উভয় দেশ ২০২৭ সাল পর্যন্ত নতুন একটি চুক্তি নবায়ন করে। এর আওতায় যুক্তরাজ্য ফরাসি সীমান্ত নিরাপত্তায় অর্থায়ন করছে। ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রোতাইয়ো জানিয়েছেন, তারা এখন এমন ব্যবস্থা নিচ্ছেন যাতে সমুদ্রে থাকা নৌকাগুলোতেও হস্তক্ষেপ করা যায়। কারণ পাচারকারীরা সৈকতের নজর এড়িয়ে সরাসরি পানির মধ্য থেকেই যাত্রীদের তুলে নিচ্ছে।
অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাজ্য প্রত্যাখ্যাত আবেদনকারীদের ফিরিয়ে দিতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সহযোগিতামূলক ‘রিটার্ন হাব’ স্থাপন নিয়ে কাজ করছে। ইতিমধ্যে ইরাক, জার্মানি, সার্বিয়া ও কসোভোর সঙ্গে চুক্তি হয়েছে।
সরকারের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, “এই সরকার অভিবাসন সমস্যার প্রতিটি ধাপে সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা নিচ্ছে।”
উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর একদিনে সর্বোচ্চ ১,৩০৫ জন অভিবাসী ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছিলেন। ওই বছর মোট অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ৪৫,৭৭৪ জন। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৩৬ হাজার ৮০০-তে। চলতি বছরের বর্তমান গতি ধরে রাখলে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে ২০২৫ সালে এ পর্যন্ত অন্তত ১৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যেখানে ২০২৪ সালে নিহতের সংখ্যা ছিল ৭৮ জন। এদিকে, গত সপ্তাহে ফরাসি উপকূলে চারটি পৃথক অভিযানে মোট ১৮৪ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফ্রান্সের উপকূলরক্ষী বাহিনী। উদ্ধার অভিযানগুলোতে ফোর্ট-মাহোঁ, উইমেরু, গ্র্যান্ড-ফোর্ট-ফিলিপ এবং ডানকির্ক এলাকায় ৭৮, ৬১, ৯ ও ৩৬ জনকে উদ্ধার করা হয়।