
প্রিন্ট: ২৬ জুন ২০২৫, ০৩:০৭ পিএম
গাজায় ত্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে মৃত্যুকেন্দ্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ১১:৩৬ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
গাজা উপত্যকার ক্ষুধার্ত মানুষগুলো প্রতিদিন সূর্য ওঠার আগেই ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে সমবেত হয়। সন্তানদের কান্না থামাতে রুটি খুঁজে বের হন অসহায় বাবা-মায়েরা। তবে রুটির বদলে তাদের অনেকেই ফিরে আসছেন রক্তাক্ত শরীর নিয়ে, কেউ স্ট্রেচারে, কেউ আর ফিরছেন না—মৃতদেহ হয়ে।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলে রাফা ও খান ইউনিসের মার্কিন সহায়তায় পরিচালিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলো যেন পরিণত হয়েছে একেকটি মৃত্যুকেন্দ্রে। সামান্য খাদ্যের আশায় ভিড় করা নিরীহ মানুষদের লক্ষ্য করে চালানো হচ্ছে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর গুলি। প্রাণ হারাচ্ছেন অসংখ্য ফিলিস্তিনি। আহত হচ্ছেন শত শত।
রোববার মাথায় গুলি খেয়ে নিহত হয়েছেন শুয়াইব আবু তইর নামের এক ব্যক্তি। চার সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে রুটি আনতে বেরিয়েছিলেন তিনি। তার শ্যালিকা আসমা আবু সালাহ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “সে তো শুধু পানি আর রুটির জন্য গিয়েছিল। বাচ্চারা বলেছিল—বাবা, খাবার দাও। সেই রুটি আনতেই গিয়েছিল। কিন্তু ফিরেছে গুলিবিদ্ধ হয়ে, মাথায় গুলি খেয়ে।”
স্থানীয় সাংবাদিক মোহাম্মদ ঘারিব জানিয়েছেন, রাফায় এক মার্কিন সহায়তা পয়েন্টের কাছাকাছি গোলচত্বরে হাজারো মানুষকে জড়ো হতে বলা হয়েছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই চারপাশ থেকে গুলি ছুড়তে শুরু করে ইসরাইলি সেনারা। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, মাথা ও বুক লক্ষ্য করেই গুলি ছোড়া হয়।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (UNRWA) জানিয়েছে, গাজায় বর্তমানে সহায়তা কেন্দ্রগুলো অনেকটাই ‘গোপন মৃত্যুফাঁদে’ পরিণত হয়েছে।
গাজা ফিল্ড হাসপাতালের পরিচালক মারওয়ান আল-হেমস এই ঘটনাগুলোকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। রোববারের ঘটনায় হতাহতদের রক্ত না শুকাতেই সোমবারও ত্রাণের লাইনে গুলিবর্ষণ করেছে ইসরাইলি বাহিনী, যাতে আরও তিনজন নিহত ও অন্তত ৩৫ জন আহত হন।
এর আগের সপ্তাহেও মঙ্গলবার ও বুধবার একই ধরনের হামলায় নিহত হয়েছেন ৪০ জনের বেশি, আহত হয়েছেন ৩০০-রও বেশি মানুষ।
শুধু ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র নয়, গাজাজুড়ে চলছে লাগাতার হামলা। সোমবার ইসরাইলি বিমান হামলায় বেইত লাহিয়ার একমাত্র কিডনি ডায়ালাইসিস কেন্দ্র—নূরা আল-কাবি—সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়।
আলজাজিরার তথ্য অনুযায়ী, শুধু গত ২৪ ঘণ্টাতেই গাজায় নিহত হয়েছেন ৫২ জন। আর ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হামলা চলাকালীন ইসরাইলি আগ্রাসনে প্রাণ হারিয়েছেন মোট ৫৪,৪৭০ জন ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন ১,২৪,৬৯৩ জন।
ত্রাণ নয়, এখন গাজাবাসীর কাছে প্রতিদিনের সংগ্রাম হয়ে দাঁড়িয়েছে বেঁচে থাকার লড়াই। রুটি খুঁজতে গিয়ে জীবন হারানোই যেন হয়ে উঠেছে নিয়তি।