
প্রিন্ট: ২৬ জুন ২০২৫, ০৪:১৮ এএম
৩৩ দেশে সন্ত্রাসবিরোধী বার্তা পৌঁছাতে ভারতের কূটনৈতিক উদ্যোগ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ মে ২০২৫, ১০:৫২ পিএম

পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্র
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পরিসরে দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরতে এক ব্যতিক্রমী কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। আগামী রোববারের মধ্যে বিশ্বের ৩৩টি দেশে ৭টি পৃথক প্রতিনিধিদল পাঠাবে দিল্লি, যাদের মূল উদ্দেশ্য—ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানকে জোরালোভাবে তুলে ধরা এবং পাকিস্তানের ভূমিকাকে বিশ্ববাসীর সামনে উন্মোচন করা।
এই প্রতিনিধি দলগুলোতে ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাংসদ এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নিচ্ছেন। বিরোধী দলের নেতারাও নেতৃত্ব দিচ্ছেন কয়েকটি দলে, যেমন কংগ্রেসের শশী থারুর, ডিএমকে’র কানিমোরি এবং এনসিপি’র সুপ্রিয়া সুলে। যদিও থারুরকে প্রথমে কংগ্রেসের প্রস্তাবে রাখা হয়নি, তবুও কেন্দ্রীয় সরকার তাঁকেই বেছে নেয়। এ নিয়ে কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে কিছুটা মতবিরোধ দেখা দিলেও বর্তমানে মূল লক্ষ্যেই সবাই একতাবদ্ধ।
তৃণমূল কংগ্রেসের ইউসুফ পাঠানকে প্রথমে অনুমতি ছাড়া অন্তর্ভুক্ত করায় আপত্তি জানিয়েছিল দলটি। পরবর্তীতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুপারিশে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয় প্রতিনিধিদলে।
পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্র সম্প্রতি প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি জানান, যেসব দেশে এই প্রতিনিধি দল পাঠানো হচ্ছে, তার মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, মিসরসহ আরও অনেক দেশ। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোর পাশাপাশি প্রভাবশালী এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোকেও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বিজেপি সাংসদ অপরাজিতা সারাঙ্গি জানান, এই উদ্যোগের মাধ্যমে ভারত তার অবস্থান বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে চায়। তিনি বলেন, "পাকিস্তান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সদস্য এবং তারা এই সময়ের মধ্যে ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে বিভ্রান্তিকর প্রচার চালাতে পারে। আমরা তাই আগেভাগেই নিজেদের বার্তা স্পষ্টভাবে পৌঁছে দিতে চাই।"
জেডিইউ নেতা সঞ্জয় কুমার ঝা বলেন, “আমাদের প্রতিনিধি দলগুলোর কাজ হবে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে বোঝানো যে পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে রীতিমতো লালন-পালন করছে। ভারত একটি ঐক্যবদ্ধ ও শান্তিপ্রিয় দেশ, যা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আপসহীন।”
বিজেপির প্রবীণ নেতা রবিশংকর প্রসাদ নেতৃত্ব দেবেন ইউরোপগামী একটি প্রতিনিধিদলের। ইতোমধ্যেই ১৭ সদস্যের ফরাসি সিনেট প্রতিনিধিদল ভারত সফর করে সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানে ভারতের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে।
এই উদ্যোগে কেবল রাজনৈতিক নেতারাই নন, অংশ নিচ্ছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরাও। যেমন গোলাম নবী আজাদ, এম জে আকবর, সলমন খুরশিদ, মুরলীধরণ এবং আনন্দ শর্মা।
প্রবীণ সাংবাদিক শারদ গুপ্তার ভাষায়, “যেমনটা এক সময় নরসিংহ রাও বিরোধীদলীয় নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ীকে আন্তর্জাতিক ফোরামে পাঠিয়ে দেশের স্বার্থে ঐক্য প্রদর্শন করেছিলেন, আজও তেমন একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ দেখছে দেশ।”
পেহেলগামে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পর ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে ভারত যেভাবে সন্ত্রাসবিরোধী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, তা দেশের প্রতিটি স্তরে আবেগ ও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এই আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচার কার্যক্রম বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দেবে—ভারত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক ও অভিন্ন।
এ উদ্যোগের মাধ্যমে দিল্লি শুধু পাকিস্তানের সন্ত্রাস পৃষ্ঠপোষকতার নিন্দাই করছে না, বরং একটি শক্তিশালী বার্তাও দিচ্ছে: "ভারতীয় রাজনীতি সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ, এবং বিশ্বকেও এই যুদ্ধে পাশে চায়।"