
প্রিন্ট: ২৪ জুন ২০২৫, ০৫:০২ এএম
ট্রাম্পের সফর শেষে হতেই গাজা, ইয়েমেনে ইসরায়েলের হামলা জোরাদার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৫, ১১:০৬ এএম

ছবি : সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ হতে না হতেই ফের আগ্রাসী হয়ে উঠেছে ইসরায়েল। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা ও ইয়েমেনের হুথি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ব্যাপক সামরিক অভিযান চালিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।
স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের তথ্যানুযায়ী, শুক্রবার (১৬ মে) সারা রাত ধরে গাজার দাইর আল-বালাহ ও খান ইউনিস অঞ্চলে টানা বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে অন্তত ১০৮ জন নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বলছে, হামাসের হাতে আটক ৫৮ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্ত করতেই এ অভিযান। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটস হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, জিম্মিদের মুক্তি না দিলে আরও বড় সামরিক অভিযান আসবে।
এছাড়া ইয়েমেনের হুথি নিয়ন্ত্রিত দুটি বন্দরেও বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল, যাতে অন্তত একজন নিহত ও নয়জন আহত হয়েছেন।
গাজা ও ইয়েমেনের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ট্রাম্পের সফর শেষ হওয়ার পরই হামলার মাত্রা বেড়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, সফর-পরবর্তী সময়ে ইসরায়েলি হামলায় ১৩০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
গাজায় গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে মানবিক সহায়তা বন্ধ রেখেছে ইসরায়েল। ট্রাম্পের সফরে যুদ্ধবিরতি বা মানবিক ত্রাণ কার্যক্রম পুনরায় চালুর সম্ভাবনা থাকলেও, সফরের সময় তিনি তেমন কোনো অবস্থান নেননি। সফরের শেষ দিনে আবুধাবিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কেবল মানবিক সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, আমাদের দৃষ্টি গাজার দিকে। সেখানে ভয়াবহ অবস্থা চলছে। অসংখ্য মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে।
এদিকে ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগও চালিয়ে যাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। তারা গাজায় হামাস এবং ইয়েমেনে হুথিদের সমর্থনকারী দেশটির সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির চেষ্টা করছে।
নেতানিয়াহুর হুমকি ও অভিযানের পূর্বাভাস
ইয়েমেনে হামলার পর নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে হুঁশিয়ার করেন, এমন আরও অনেক কিছু আসবে। চলতি মাসের শুরু থেকে হুথিদের লক্ষ্য করে একাধিক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। হুথিদের দাবি, ট্রাম্পের সফরের সময় তারা ইসরায়েল লক্ষ্য করে ছোড়া বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে।
একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানান, গাজায় সাম্প্রতিক হামলাগুলো একটি বড় ধরনের অভিযানের সূচনাবিন্দু। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে হামাসের হাতে আটক থাকা ৫৮ জন ইসরায়েলি নাগরিকের মুক্তি না হলে, পূর্ণাঙ্গ অভিযান শুরু হবে বলে আগেই সতর্ক করেছিল ইসরায়েল।
নেতানিয়াহু ঘোষণা দেন, অসাধারণ শক্তি দিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় প্রবেশ করতে আর মাত্র কয়েকদিন দূরে রয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাটস জানান, গত সপ্তাহে চালানো হামলাগুলোর লক্ষ্য ছিলেন হামাসের সামরিক শাখার নেতা মোহাম্মদ সিনওয়ার।
মোহাম্মদ সিনওয়ার হলেন ৭ অক্টোবরের হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ভাই, যিনি আগেই নিহত হয়েছেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে বড় হামলা চালিয়ে ১২০০ জন বেসামরিক নাগরিক হত্যা এবং ২৫১ জনকে অপহরণ করে। এরপর থেকেই প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েল গাজায় তীব্র হামলা শুরু করে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৫৩ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। খাদ্য, পানি ও ওষুধের মারাত্মক সংকটে অঞ্চলটির মানবিক পরিস্থিতি চরমে পৌঁছেছে।
তিন মাসের অবরোধে ধুঁকছে গাজা
১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে নতুন করে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এতে বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখো মানুষ। বর্তমানে গাজার প্রায় ৫০ শতাংশ এলাকা ইসরায়েলি সেনার নিয়ন্ত্রণে। যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ইসরায়েল খাদ্য, জ্বালানি ও পানির প্রবেশ বন্ধ করে দেয়, ফলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।
জাতিসংঘ সীমিত পরিসরে মানবিক রান্নাঘর চালু করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত একটি বেসরকারি সংস্থা নতুন করে ত্রাণ সরবরাহের উদ্যোগ নিলেও তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে জাতিসংঘ।
শুক্রবার জাতিসংঘ জানায়, স্থানীয়দের মজুদকৃত খাদ্য ভাগ করে নিয়ে বন্ধ থাকা ১৮টি রান্নাঘর আবার চালু করা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত নতুন সংস্থার ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা মানবিক নীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলেও অভিযোগ তুলেছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবিক সংস্থা।
তারা বলছে, গাজার মানুষের চাহিদার তুলনায় এ ত্রাণ ব্যবস্থা অপ্রতুল ও অসম্পূর্ণ। এ কারণেই বহু সংস্থা এই বিতরণ প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে।