
প্রিন্ট: ২৪ জুন ২০২৫, ০১:০৬ এএম
ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণ : ইসরায়েলের ছায়া নাকি নিছক দুর্ঘটনা?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১১ এএম

ছবি : সংগৃহীত
ইরানের দক্ষিণের হরমুজগান প্রদেশের বান্দার আব্বাস শহরের কাছে অবস্থিত দেশটির বৃহত্তম বাণিজ্যিক কেন্দ্র, শাহিদ রাজাইয়ে বন্দরে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছে পুরো এলাকা। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে, এ ঘটনায় অন্তত চারজন নিহত এবং প্রায় ৫৫০ জনের মতো মানুষ আহত হয়েছেন।
প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, বন্দরের জেটি অঞ্চলে সংরক্ষিত রাসায়নিক এবং দাহ্য পদার্থের কন্টেইনারে অগ্নিকাণ্ডের সূত্র ধরে বিস্ফোরণ ঘটে। ইরানের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তারা এই ঘটনাকে দুর্ঘটনা হিসেবে মূল্যায়নের আহ্বান জানালেও বিস্ফোরণের সময়কাল ও প্রকৃতি নানা সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।
ঘটনার সময় ওমানে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি সংক্রান্ত তৃতীয় দফার আলোচনা চলছিল এবং দুই পক্ষই তখন পর্যন্ত আলোচনায় অগ্রগতির আভাস দিয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে বন্দরের বিস্ফোরণ কাকতালীয় না উদ্দেশ্যমূলক, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেক বিশ্লেষক।
বিশ্লেষকদের মতে, এ ঘটনাটি নিছক দুর্ঘটনা নাও হতে পারে। কিছু সূত্র দাবি করছে, বিস্ফোরিত কন্টেইনারে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির জন্য ব্যবহৃত জ্বালানি উপাদান রাখা ছিল, যা ইঙ্গিত দিতে পারে পূর্বপরিকল্পিত হামলার দিকে।
ইতিপূর্বেও ইরানের পরমাণু ও সামরিক স্থাপনাগুলিতে গুপ্ত হামলার অভিযোগে ইসরায়েলের নাম উঠে এসেছে। ফলে এই বিস্ফোরণের পেছনে ইসরায়েলের সম্পৃক্ততার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। যদিও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা তাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, তবুও বিশ্লেষকরা তাদের বক্তব্য নিয়ে সতর্কতা বজায় রাখছেন। বিশেষ করে যখন ইসরায়েল বরাবরই ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সমঝোতার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে আপত্তি জানিয়ে আসছে।
ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, কোনো চুক্তির মাধ্যমে ইরান যদি পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জন করে, তা পুরো মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে উঠবে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত কোনো সমঝোতা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন।
এদিকে, ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বিস্ফোরণের ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সম্ভাব্য সব কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে, যার মধ্যে অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনাও বিবেচনায় রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি এই বিস্ফোরণ উদ্দেশ্যমূলক হয়ে থাকে, তাহলে তা শুধু ইরান নয়, সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিবেশ আরও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। আর যদি এটি নিছক দুর্ঘটনাই হয়, তবুও ঘটনাটির সময় ও প্রেক্ষাপট ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার চলমান কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে বড়ভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
পরিস্থিতি যেভাবেই মোড় নিক না কেন, শাহিদ রাজাইয়ে বন্দরের বিস্ফোরণ নিঃসন্দেহে মধ্যপ্রাচ্যের জটিল ভূরাজনীতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
সূত্র : বিবিসি, এমএসএন, টাইমস অব ইসরায়েল