
প্রিন্ট: ২৫ জুন ২০২৫, ০১:২৬ এএম
হুমকি আর সম্ভাবনার দোলাচলে শেষ হলো যুক্তরাষ্ট্র-ইরান বৈঠক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০১:১৪ এএম

ছবি : সংগৃহীত
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও ক্রমবর্ধমান সামরিক চাপের ছায়াতলে দ্বিতীয়বারের মতো পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে মুখোমুখি না হয়ে, পরোক্ষভাবে বৈঠক করলো ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র। বৈঠকটি হয়েছে এমন একধরনের কৌশলী পরিবেশে, যেখানে দুই পক্ষ বসেছিল আলাদা দুই কক্ষে—আর বার্তাবাহক ছিলেন ওমানের কূটনীতিকরা।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) ইতালির রাজধানী রোমে অবস্থিত ওমান দূতাবাসে অনুষ্ঠিত এই বিশেষ আলোচনা সামনে নিয়ে আসে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি।
ইরানি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি, আর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অংশ নেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। এটি ছিল ট্রাম্প প্রশাসন ফেরার পর ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা, মাত্র এক সপ্তাহ আগেই ওমানের মাস্কাটে প্রথম দফা হয়েছিল।
প্রথম আলোচনার পর আরাগচি বলেছিলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কিছু আন্তরিকতার ইঙ্গিত দেখেছি, তবে তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের সন্দেহ এখনো কাটেনি।”
রোমে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফার বৈঠকে ইরান স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, আলোচনার বিষয়বস্তু কেবল পরমাণু কর্মসূচি ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার পর্যন্তই সীমিত থাকতে হবে। কোনো অতিরিক্ত ইস্যু তারা মানবে না। আরাগচি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র যদি বাস্তবতার বাইরে কোনো দাবি না তোলে, তাহলে সমঝোতা সম্ভব।”
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় আলোচনায় ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মিলিশিয়া গোষ্ঠীর প্রতি ইরানের সমর্থন বিষয়েও আলাপ হোক—যা তেহরান এক কথায় প্রত্যাখ্যান করেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে ওবামা প্রশাসনের উদ্যোগে হওয়া ঐতিহাসিক চুক্তিতে ইরান তাদের পরমাণু কার্যক্রম সীমিত করার প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু ২০১৮ সালে ট্রাম্প হঠাৎ করেই যুক্তরাষ্ট্রকে সেই চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নিয়ে ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে আবার আলোচনার টেবিলে ফেরা হলেও, দ্বিপাক্ষিক আস্থার ঘাটতি এখনো স্পষ্ট।
এদিকে, তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ইসরায়েলও চুপ করে নেই। নিউইয়র্ক টাইমস–এর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলার পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে চেয়েছিলেন। তবে ট্রাম্প প্রশাসন সামরিক অভিযান এড়িয়ে কূটনৈতিক পথেই অগ্রসর হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থা আইএইএ (IAEA)-এর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি ফরাসি দৈনিক লা মন–এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “তেহরান এখন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পর্যায়ে পৌঁছাতে খুব কাছাকাছি।”
সবমিলিয়ে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনার গতিপথ যতই এগোচ্ছে, ততই বাড়ছে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ। উত্তেজনার আগুন যেন এক গোপন ছায়া থেকে ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে জ্বলে উঠছে—শেষ কোথায় গিয়ে ঠেকে, তা এখনও এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।