
প্রিন্ট: ২৩ জুন ২০২৫, ১০:৫০ পিএম
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে ইসরায়েলের হামলার গোপন পরিকল্পনা ফাঁস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২২ এএম

ছবি : সংগৃহীত
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার গোপন পরিকল্পনা প্রকাশ পেয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস সম্প্রতি প্রকাশিত এক অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদনে এই বিস্ফোরক তথ্য সামনে এনেছে।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইসরায়েল সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সহায়তায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বিষয়টি দেশটির নিরাপত্তা মহলে গভীর গুরুত্ব সহকারে আলোচনা হচ্ছিল এবং সম্ভাব্য হামলার জন্য বিভিন্ন কৌশলগত বিকল্পও বিবেচনায় আনা হচ্ছিল।
নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর ইসরায়েলের ওপর প্রায় ২০০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনার পর ইরানবিরোধী সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা জোরালো হয়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবং উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এ পরিকল্পনায় আগ্রহ দেখালেও, চূড়ান্ত বাস্তবায়নের জন্য তারা মার্কিন অনুমোদনকেই প্রধান শর্ত হিসেবে বিবেচনা করছিল।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ইসরায়েল দু’ধরনের অভিযান পরিকল্পনা করেছিল— একটি ছিল বিশাল বিমান হামলা, অন্যটি ছিল বিমান হামলা এবং কমান্ডো অভিযানের সমন্বিত রূপ। এই ধরনের অভিযান ইতোপূর্বে সিরিয়ার পারমাণবিক স্থাপনায় ব্যবহার করেছিল ইসরায়েল।
তবে এই পরিকল্পনার তথ্য ফাঁস হওয়াকে ইসরায়েলি ইতিহাসে সবচেয়ে বিপজ্জনক ‘লিক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন দেশটির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এরইমধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র বিতর্ক। বিরোধীরা অভিযোগ করছেন, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রাজনৈতিক চাপ মোকাবেলায় ইচ্ছাকৃতভাবে এই তথ্য প্রকাশ করেছেন।
সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আভিগডোর লিবারম্যান বলেন, “নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন পড়ার পর মনে হয়েছে আমরা ভাগ্যবান, সিরিয়া ও ইরাকে বোমা হামলার সময় নেতানিয়াহু প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না।” তিনি ইঙ্গিত দেন, নেতানিয়াহু রাজনৈতিক সুবিধা নিতে এই গোপন পরিকল্পনা ফাঁস করেছেন।
এদিকে, এই বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাও আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। ইসরায়েল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সক্রিয় অংশগ্রহণ চাইলেও, সে সময় মার্কিন নীতিনির্ধারকেরা হামলার বিরোধিতা করে কূটনৈতিক আলোচনার ওপর জোর দেন।
এই তথ্য ফাঁস আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাড়িয়েছে উদ্বেগ। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এমন সংবেদনশীল তথ্যের প্রকাশ মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। ইরান হয়তো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে, যা গোটা অঞ্চলে সংঘাতের নতুন অধ্যায় শুরু করতে পারে।
এই রিপোর্টকে কেন্দ্র করে স্পষ্ট হয়ে উঠছে, ইসরায়েল-ইরান সম্পর্ক শুধু আঞ্চলিক নয়, বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করতে সক্ষম। রাজনৈতিক স্বার্থ আর সামরিক কৌশলের এই দ্বন্দ্ব আগামী দিনগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।