
প্রিন্ট: ২৪ জুন ২০২৫, ১২:৪৮ পিএম
ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল নিয়ে ভারতের ব্যাখ্যা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫৮ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশের জন্য তৃতীয় দেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহারের সুবিধা—যা ট্রান্সশিপমেন্ট ব্যবস্থার আওতায় দেওয়া হয়েছিল—তা আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করেছে ভারত। এই সিদ্ধান্তের পেছনে বিভিন্ন বাস্তব কারণ তুলে ধরেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বুধবার (৯ এপ্রিল) ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু-তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে—এই সুবিধা বজায় রাখার ফলে ভারতের সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরগুলোতে মারাত্মক চাপ তৈরি হচ্ছিল। পণ্যের জট এবং দীর্ঘসূত্রতা রপ্তানি কার্যক্রমে বিলম্ব ঘটাচ্ছিল, যার ফলে পরিবহন খরচও বেড়ে যাচ্ছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাধ্য হয়েই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে।
তবে মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করেছে, নেপাল ও ভুটানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের রপ্তানি কার্যক্রম এই সিদ্ধান্তের আওতায় আসবে না। এসব দেশের উদ্দেশে যাওয়া পণ্য আগের মতোই ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করতে পারবে।
এর আগে, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস–এর এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ-বিষয়ক বাণিজ্যনীতিতে একটি বড় পরিবর্তন। বিশেষত নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যে ভারতীয় অবকাঠামো ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তির গুরুত্ব ছিল ব্যাপক। এখন সেটি বাতিল হওয়ায় বাংলাদেশকে বিকল্প পথ খুঁজতে হবে।
সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (CBIC) মঙ্গলবার একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২০ সালের ২৯ জুনের নির্দেশনাটি, যেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার বা ট্রাক ভারতীয় স্থলবন্দর হয়ে সমুদ্রবন্দর বা বিমানবন্দরে পাঠানো যেত—তা এখন থেকে আর কার্যকর থাকবে না।
গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (GTRI)-এর প্রধান ও সাবেক বাণিজ্য কর্মকর্তা অজয় শ্রীবাস্তব মন্তব্য করেন, দুই দশক ধরে ভারত বাংলাদেশের জন্য শুল্কমুক্ত রপ্তানির পথ খোলা রেখেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা—বিশেষ করে চীনের সহায়তায় বাংলাদেশের লালমনিরহাটে সামরিক বিমানঘাঁটি পুনরায় সক্রিয় করার প্রস্তাব এবং সংবেদনশীল চিকেন নেক করিডোরের কাছে কৌশলগত স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা—ভারতের কৌশলগত উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। এসব কারণে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলেও তিনি মত দেন।
তবে এখনো ভারতের ভূখণ্ডে প্রবেশ করা রপ্তানি পণ্যবাহী যানগুলোকে পূর্বের নিয়মে গন্তব্যে পৌঁছানোর সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। ভারতের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য নতুন বাণিজ্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করল, বিশেষ করে যেসব ব্যবসা ভারতের অবকাঠামোর উপর নির্ভরশীল ছিল।