
প্রিন্ট: ২৪ জুন ২০২৫, ১০:০৯ এএম
গুজরাট দাঙ্গায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করলেন মোদি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৫, ১২:০৩ এএম

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
গুজরাটে ২০০২ সালে সংঘটিত ভয়াবহ হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় এক হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারান, আহত হন আড়াই হাজারেরও বেশি এবং নিখোঁজ হন প্রায় তিন শতাধিক। সেই সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বর্তমান ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে দাবি করে যে, মোদির প্রত্যক্ষ মদতে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিল এবং তিনি প্রশাসনকে তা দমন না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে, মোদি এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন।
রোববার (১৬ মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রের কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও পডকাস্ট হোস্ট লেক্স ফ্রিডম্যানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মোদি স্পষ্টভাবে দাঙ্গার সঙ্গে তার জড়িত থাকার অভিযোগ নাকচ করেন। তিনি বলেন, ২০০২ সালের দাঙ্গা নিয়ে ব্যাপক ভুল ধারণা রয়েছে। মোদির মতে, গুজরাটে ২০০২ সালের দাঙ্গাকে সবচেয়ে বড় সহিংসতা বলা হলেও, এর আগে আরও ২৫০টির বেশি দাঙ্গা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, “ভুজের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর গুজরাট পুনর্গঠনের জন্য আমাকে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। এটি আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ছিল। আমি শপথ নেওয়ার পর থেকেই এ কাজে নিমগ্ন ছিলাম। সে সময় আমার প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ছিল না, এমনকি আমি কখনো কোনো সরকারি দফতরেও কাজ করিনি। ২০০২ সালের ২৪-২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমি প্রথমবারের মতো নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে গুজরাট বিধানসভায় যোগ দেই। ঠিক তার পরদিনই ঘটে ট্র্যাজেডিটি।”
২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি গোধরা স্টেশনে সবরমতি এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি কোচে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, যাতে ৫৯ হিন্দু তীর্থযাত্রীর মৃত্যু হয়। এরপরই গুজরাটজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে টানা তিন দিন ধরে মুসলিমদের ওপর নির্মম নির্যাতন চলে।
এ নিয়ে মোদি বলেন, “এটি ছিল অকল্পনীয় একটি ট্র্যাজেডি। মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল, যা পুরো পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তোলে। সেসময় বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাও ঘটছিল। স্বাভাবিকভাবেই সবাই শান্তি চেয়েছিল, কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।”
মোদি স্পষ্ট করে বলেন, গুজরাট দাঙ্গার সঙ্গে তার বা তার সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তিনি দাবি করেন, “২০০২ সালের ঘটনা ছিল একটি আকস্মিক বিস্ফোরণ, যা কয়েকজন মানুষকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেয়। তবে বিচার বিভাগীয় তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে যে, আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আমাদের বিরোধী দল তখন ক্ষমতায় ছিল, তারা আমাদের দোষী সাব্যস্ত করার জন্য সবকিছু করেছে, কিন্তু আদালত সুষ্ঠু তদন্ত চালিয়ে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করেছে।”
মোদি আরও বলেন, “২০০২ সালের দাঙ্গাকে সবচেয়ে বড় দাঙ্গা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, কিন্তু সেটি একমাত্র দাঙ্গা ছিল না। তার আগে গুজরাটে ২৫০টির বেশি দাঙ্গা হয়েছে। তবে আমার শাসনামলের পর থেকে সেখানে আর কোনো দাঙ্গা হয়নি।”
উল্লেখ্য, ২০০১ সালে মোদি দলীয় সিদ্ধান্তে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হন। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কেশভাই প্যাটেল অসুস্থ হলে বিজেপি মোদিকে দায়িত্ব দেয়। তিনি সাধারণ জনগণের ভোটে নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন না। এক বছরের মাথায় ২০০২ সালের দাঙ্গা সংঘটিত হয়, যা তাকে ব্যাপক বিতর্কের মুখে ফেলে।
অতীতে ‘গুজরাটের কসাই’ নামে কুখ্যাত হলেও মোদি দাবি করেন, তার নেতৃত্বে গুজরাটে ২০০২ সালের পর আর কোনো দাঙ্গা হয়নি।
সূত্র: এনডিটিভি