
প্রিন্ট: ২৪ জুন ২০২৫, ০৯:৪৩ এএম
সিরিয়ায় অভিযানে আলাউইত সম্প্রদায়ের ৭৪৫ জন নিহত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৫, ১০:০৩ এএম

ছবি : সংগৃহীত
সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে নতুন ইসলামপন্থী শাসকগোষ্ঠী ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে দুই দিনে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। দেশটির যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ সংস্থা শনিবার বিষয়টি জানিয়েছে।
রবিবার (৯ মার্চ) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৭৪৫ জন বেসামরিক নাগরিক, ১২৫ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং ১৪৮ জন আসাদপন্থী যোদ্ধা রয়েছে।
পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রধান রামি আবদুলরহমান বলেছেন, জাবলে, বানিয়াস ও আশপাশের এলাকায় সহিংসতা ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও রয়েছে, যারা আলাওয়ি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য।
বৃহস্পতিবার নতুন শাসকগোষ্ঠী বলেছে যে তারা একটি বিদ্রোহ দমন অভিযান শুরু করেছে, যা আসাদের অনুগত বাহিনীর দ্বারা চালিত হামলার প্রতিক্রিয়ায় নেওয়া হয়েছে।
একজন সিরিয়ান নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, কয়েক ডজন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এই সংঘর্ষে নিহত হয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে অভিযানের সময় কিছু অনিয়ম হয়েছে, যা তারা দোষী সাব্যস্ত করেছেন অপরিকল্পিত জনতা ও যোদ্ধাদের উপর, যারা হয়তো সরকারী বাহিনীকে সমর্থন করতে গিয়ে কিংবা সুযোগ নিয়ে অপরাধ সংগঠিত করেছে।
সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন সূত্র জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উপকূলের সব রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং শহরগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
সাম্প্রদায়িক হত্যাকাণ্ড ও উদ্বেগ
পর্যবেক্ষক সংস্থার মতে, এক গ্রামে ডজনখানেক আলাওয়ি পুরুষকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার খবর এসেছে, যা নতুন ইসলামপন্থী শাসকদের অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পশ্চিমা ও আরব দেশগুলো ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
গত ডিসেম্বরে কয়েক দশকের শাসনের পর আসাদ সরকার উৎখাত হয়।
সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ শারাআ শুক্রবার এক ভাষণে দমন অভিযানের পক্ষে মত দিলেও বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনীকে অবশ্যই সংযত থাকতে হব। কারণ আমাদের নীতিবোধই আমাদের শত্রুদের থেকে পৃথক করে।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, বেসামরিক নাগরিকদের এবং বন্দিদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা যাবে না।
শোকের মাতম
শনিবার সিরিয়ার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিহতদের ছবি ও শোকবার্তায় ছেয়ে যায়।
পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রধান আবদুলরহমান বলেন, ‘এটি আসাদপন্থী বা বিরোধীপন্থীদের ব্যাপার নয় বরং সাম্প্রদায়িক গণহত্যা, যার উদ্দেশ্য আলাওয়ি জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ করা।’
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা জানিয়েছে, তারা উপকূলীয় অঞ্চলে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা রোধ করতে কাজ করছে।
এলাকার ছয় বাসিন্দা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার থেকে হাজার হাজার আলাওয়ি ও খ্রিস্টান তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে, জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়েছে।
অনেকেই রাশিয়ার ভূমধ্যসাগরীয় সামরিক ঘাঁটি হেমেইমিমে আশ্রয় নিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাতে জানা গেছে, বানিয়াস ও আশপাশের গ্রামগুলোতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে।