১৫ বছর পর ফের চালুর পথে বিশ্বের বৃহত্তম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র, প্রস্তুত জাপান
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫২ এএম
‘ফুকোশিমা ট্র্যাজেডি’র পর টানা প্রায় ১৫ বছর বন্ধ থাকার পর ফের বিশ্বের বৃহত্তম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে জাপান। দেশটির রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ পরিষেবা সংস্থা টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি (টেপকো)–এর বরাত দিয়ে রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
কাশিওয়াজাকি-কারিওয়া পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বিশ্বের বৃহত্তম হিসেবে পরিচিত। রাজধানী টোকিও থেকে প্রায় ২২০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে নিগাতা প্রদেশের একটি বন্দরশহরে অবস্থিত এই কেন্দ্রটির আয়তন প্রায় ৪২ লাখ বর্গমিটার বা ৪২০ হেক্টর। এখানে মোট সাতটি পরমাণু চুল্লি রয়েছে, যেগুলোর সম্মিলিত বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা প্রায় ৮ দশমিক ২ গিগাওয়াট। কেন্দ্রটির পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে টেপকো।
২০১১ সালে ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামির আঘাতে ফুকোশিমা দাইচি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ জাপানের বিভিন্ন স্থাপনার মোট ৫৪টি পরমাণু চুল্লি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই তালিকায় কাশিওয়াজাকি-কারিওয়া কেন্দ্রের চুল্লিগুলোর নামও ছিল।
ভূমিকম্প ও সুনামির পর ফুকোশিমা দাইচি কেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। ইতিহাসে এই ঘটনা ‘ফুকোশিমা ট্র্যাজেডি’ নামে পরিচিত, যা চেরনোবিলের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পরমাণু দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত।
দুর্যোগের প্রাথমিক ধাক্কা কাটার পর বিশেষজ্ঞরা ক্ষতিগ্রস্ত চুল্লিগুলো পর্যালোচনা করে জানান, ৫৪টির মধ্যে ৩৩টি চুল্লি মেরামত করে পুনরায় উৎপাদন উপযোগী করা সম্ভব। ওই তালিকায় কাশিওয়াজাকি-কারিওয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুল্লিগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
টেপকোর কর্মকর্তারা জানান, মেরামতযোগ্য ৩৩টি চুল্লির মধ্যে ইতোমধ্যে ১৪টিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। কাশিওয়াজাকি-কারিওয়া কেন্দ্রের চুল্লিগুলো চালু হলে সচল চুল্লির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ২১টিতে।
জাপান ঐতিহাসিকভাবে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল এবং নীতিগতভাবে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমাতে আগ্রহী। ফুকোশিমা ট্র্যাজেডির আগে দেশটির মোট বিদ্যুৎ চাহিদার প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই আসত পরমাণু বিদ্যুৎ থেকে।
তবে দুর্ঘটনার পর অধিকাংশ পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জাপানকে গ্যাস ও কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানির দিকে ঝুঁকতে হয়। এতে বিদ্যুতের দামও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। শুধু ২০২৪ সালেই জাপান প্রায় ৬ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের গ্যাস ও কয়লা আমদানি করেছে, যা ওই বছরের মোট আমদানি ব্যয়ের প্রায় এক-দশমাংশ।



