ন্যায়বিচারের সব পথ রুদ্ধ, রাজপথই শেষ ভরসা: ইমরান খান
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:০৩ পিএম
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, ন্যায়বিচার পাওয়ার সব পথ যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন রাজপথের প্রতিবাদই একমাত্র অবলম্বন। সে কারণেই তিনি দলীয় কর্মী-সমর্থকদের রাজপথের আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের খবরে বলা হয়েছে, তোশাখানা-২ মামলায় ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবিকে ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়ার পর শনিবার ইসলামাবাদের খাইবার পাখতুনখাওয়া হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে পিটিআই মহাসচিব সালমান আকরাম রাজা ইমরান খানের এই বার্তা তুলে ধরেন।
সালমান আকরাম রাজা জানান, দলের আইনজীবীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ইমরান খানকে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, আসন্ন বিচারকাজের জন্য জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে আদালতকক্ষে পরিবারের সদস্যদের প্রবেশও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি বিচারকেরা সরাসরি উপস্থিত না থেকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে হাজিরা দেবেন বলে উল্লেখ রয়েছে।
তিনি বলেন, আদালতের বিদ্যমান আদেশে ইমরান খানের উন্মুক্ত ও সুষ্ঠু বিচারের অধিকার নিশ্চিত করার কথা থাকলেও মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার তাঁর নির্ধারিত সাক্ষাৎ বাতিল করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে—এমন দাবি ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে প্রত্যাখ্যান করেন রাজা।
রাজার ভাষ্য অনুযায়ী, ইমরান খান বলেছেন, তিনি নিজের অবস্থান থেকে ‘একচুলও’ নড়বেন না এবং প্রয়োজনে শাহাদাত বরণ করতেও প্রস্তুত। তাঁকে উদ্ধৃত করে রাজা বলেন, ‘বিচারের দরজা বন্ধ, আদালতের শুনানি কার্যত থমকে গেছে, ন্যায়বিচার আর নাগালের মধ্যে নেই—তাই প্রতিবাদই একমাত্র পথ।’
তিনি আরও জানান, পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা সব রাজবন্দীর, বিশেষ করে নারী বন্দীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন এবং জনগণকে তাদের অধিকার আদায়ে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এদিন ইমরান খান তাঁর আইনজীবী সালমান সাফদারের সঙ্গে স্বল্প সময়ের জন্য সাক্ষাৎ করেছেন বলেও নিশ্চিত করেন রাজা। তাঁর অভিযোগ, ইমরান খানের অনুপস্থিতিতে এবং তাঁর আইনজীবী দলের কাউকে উপস্থিত থাকার সুযোগ না দিয়েই রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
রাজা বলেন, স্ত্রী বুশরা বিবির কারাদণ্ড নিয়ে ইমরান খান গভীরভাবে ব্যথিত। তাঁর দাবি, কেবল ইমরান খানের স্ত্রী হওয়ার কারণেই বুশরা বিবিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে তোশাখানা মামলায় দেওয়া এই সাজাকে ঘিরে পিটিআই ও বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতারা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে পিটিআই এই রায়কে ‘ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়’ বলে আখ্যা দেয়। দলটির দাবি, রায় ঘোষণার সময় ইমরান খান আদিয়ালা কারাগারে স্থাপিত আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
পিটিআই আরও অভিযোগ করেছে, ইমরান খানের পরিবারের সদস্যদের আদালতকক্ষে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। তারা এই বিচারপ্রক্রিয়াকে ‘অবাধ বা সুষ্ঠু নয়’ উল্লেখ করে একে কার্যত ‘মিলিটারি ট্রায়াল’ বলে অভিহিত করেছে।
দলটির জ্যেষ্ঠ নেতা ওমর আইয়ুব বলেন, পাকিস্তানে আইনের শাসনের আর কোনো অস্তিত্ব নেই। বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টির প্রধান আখতার মঙ্গল প্রশ্ন তুলেছেন, তোশাখানা বা রাষ্ট্রবিরোধী অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রীদের কেন একই পরিণতির মুখোমুখি হতে হয়নি। তিনি এই পরিস্থিতিকে ‘স্পষ্ট অবিচার’ বলে আখ্যা দেন।
তেহরিক তাহাফ্ফুজ আইন-ই-পাকিস্তানের নেতা আল্লামা নাসির আব্বাস বলেন, এই রায় জনগণের অধিকার ও সংসদকে অবমূল্যায়ন করেছে। একই দলের নেতা মোস্তফা নওয়াজ খোকার বলেন, এই নিপীড়ন শুধু রাজনীতিবিদদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই।
অন্যদিকে তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার রায়ের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, আদালত পর্যাপ্ত প্রমাণ পর্যালোচনার পরই ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রীকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। তার দাবি, দম্পতি দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন এবং রায়টি সুষ্ঠু। তিনি আরও বলেন, ১৯০ মিলিয়ন পাউন্ড দুর্নীতি মামলায় সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরই তোশাখানা মামলায় ইমরান খানের কারাদণ্ড কার্যকর হবে।



