ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ মেক্সিকোর, পাল্টা উপযুক্ত ব্যবস্থার ইঙ্গিত নয়াদিল্লির
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রের পথ অনুসরণ করে ভারতের পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকো। এই শুল্ক কার্যকর থাকলে মেক্সিকোর বাজারে ভারতীয় পণ্যের প্রবেশ উল্লেখযোগ্যভাবে কঠিন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভারতের সঙ্গে বড় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যেই ট্রাম্প প্রশাসনের মতো নীতিতে ভারতীয় রপ্তানির ওপর এই উচ্চ শুল্ক বসিয়েছে মেক্সিকো।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম মানি কন্ট্রোলের খবরে বলা হয়েছে, মেক্সিকোর এ সিদ্ধান্তের জবাবে নয়াদিল্লি জানিয়েছে, তারা নিজেদের রপ্তানিকারকদের স্বার্থ রক্ষায় ‘উপযুক্ত ব্যবস্থা’ নিতে পারে। এক সরকারি কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করে বার্তা সংস্থা পিটিআইকে বলেন, পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
এর আগে চলতি সপ্তাহের শুরুতে মেক্সিকোর সিনেট একটি নতুন শুল্ক কাঠামো অনুমোদন করে, যা ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার মতো যেসব দেশের সঙ্গে মেক্সিকোর কোনো মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নেই, সেসব দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর এই শুল্ক আরোপ করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ভারত মেক্সিকোর সঙ্গে অংশীদারত্বকে বিশেষ গুরুত্ব দেয় এবং একটি স্থিতিশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্যিক পরিবেশ গড়ে তুলতে একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত, যাতে দুই দেশের ব্যবসা ও সাধারণ মানুষই উপকৃত হয়।
শুল্কের প্রভাব কমাতে ভারত ইতিমধ্যেই মেক্সিকোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর মেক্সিকোতে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করে, যাতে ভারতীয় রপ্তানির জন্য বিশেষ ছাড় পাওয়া যায়। ওই কর্মকর্তা জানান, বাণিজ্য দপ্তর মেক্সিকোর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে বিশ্ব বাণিজ্য নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, পারস্পরিক সুবিধাজনক সমাধান খুঁজছে।
এদিকে দুই দেশ একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরুর প্রস্তুতিও নিচ্ছে। আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলি দ্রুত চূড়ান্ত হলে তা ভারতীয় রপ্তানিকারকদের এই উচ্চ শুল্ক থেকে সুরক্ষা দিতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যে ভারতের বাণিজ্যসচিব রাজেশ আগরওয়াল ও মেক্সিকোর উপ-অর্থমন্ত্রী লুইস রোসেন্ডোর মধ্যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। আগামী সপ্তাহগুলোতে আরও কারিগরি আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা হলেও, ভারত তার রপ্তানিকারকদের স্বার্থ রক্ষার অধিকার সংরক্ষণ করবে।
তিনি আরও বলেন, এই শুল্কের প্রকৃত প্রভাব নির্ভর করবে মেক্সিকোর অভ্যন্তরীণ সরবরাহ শৃঙ্খলে ভারতীয় পণ্যের গুরুত্ব এবং ভারতীয় কোম্পানিগুলো শুল্ক ছাড় আদায় বা বাড়তি খরচ ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিতে কতটা সক্ষম, তার ওপর।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের সতর্কবার্তার পরই মেক্সিকো এই শুল্ক বাড়ানোর পথে হাঁটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ ছিল, সস্তা চীনা পণ্য মেক্সিকো হয়ে মার্কিন বাজারে প্রবেশ করছে। মেক্সিকো এই পদক্ষেপকে নিজেদের শিল্প সুরক্ষা, কর্মসংস্থান রক্ষা এবং সস্তা আমদানিজনিত বাজারের ভারসাম্যহীনতা দূর করার উদ্যোগ হিসেবে দেখাচ্ছে।
ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনসের মহাপরিচালক অজয় সাহাই বলেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে অটোমোবাইল, অটো যন্ত্রাংশ, যন্ত্রপাতি, বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিকস, অরগানিক কেমিক্যাল, ওষুধ, টেক্সটাইল ও প্লাস্টিক খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তিনি বলেন, এত উচ্চ শুল্ক আমাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমাবে এবং দীর্ঘদিনের গড়ে ওঠা সরবরাহ শৃঙ্খলে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে ভারত মেক্সিকোতে ৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, বিপরীতে মেক্সিকো থেকে আমদানি হয়েছে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। চলমান আলোচনা ও সম্ভাব্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এই শুল্ক-চাপের মধ্যেও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক স্থিতিশীল রাখতে এবং ভারতীয় রপ্তানিকারকদের স্বার্থ রক্ষায় সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।



