রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করল ভারতের রিলায়্যান্স
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩৩ পিএম
বিলিয়নিয়ার মুকেশ আম্বানির মালিকানাধীন ভারতের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ অবশেষে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানি বন্ধ করেছে। গুজরাটের জামনগর শোধনাগার—যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় একক-সাইট রিফাইনারি কমপ্লেক্স—এখন আর রুশ তেল প্রক্রিয়াজাত করবে না বলে প্রতিষ্ঠানটি ঘোষণা দিয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন নিষেধাজ্ঞা এবং যুক্তরাষ্ট্রের রোসনেফট-লুকোইলের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার পরপরই এই বড় সিদ্ধান্ত নেয় রিলায়েন্স।
২০২৬ সালের ২১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হতে যাওয়া তৃতীয় দেশের মাধ্যমে রুশ অপরিশোধিত তেলজাত জ্বালানি আমদানির ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলতেই আগেভাগে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রিলায়েন্স। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, সব বিধিনিষেধ ঠিকভাবে মানার লক্ষ্যে তারা নির্ধারিত সময়ের আগেই পরিবর্তনটি সম্পন্ন করেছে।
রিলায়েন্সের এই ঘোষণায় স্বাগত জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। ওয়াশিংটন পোস্টকে দেওয়া এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র জানায়, তারা এই পরিবর্তনকে উৎসাহব্যঞ্জক মনে করছে এবং ভারত–যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনায় নতুন অগ্রগতির অপেক্ষায় রয়েছে।
রুশ তেল ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরে দিল্লি–ওয়াশিংটনের সম্পর্ক টানটান ছিল। ট্রাম্প প্রশাসন গত আগস্টে ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, যার মধ্যে ২৫ শতাংশ ছিল রুশ তেল ও অস্ত্র কেনার অভিযোগে ‘শাস্তিমূলক’ শুল্ক। ভারত বারবার এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও রুশ তেল আমদানি বাড়িয়ে যেতে থাকে—২০২২ সালের আগে যেখানে ভারতের রুশ তেল আমদানি ছিল ২.৫ শতাংশ, তা ২০২৪-২৫ সালে দাঁড়ায় প্রায় ৩৫.৮ শতাংশে। এর অর্ধেকই আমদানি করত রিলায়েন্স।
তবে বাড়তি চাপ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। বিভিন্ন প্রতিবেদন বলছে, গত কয়েক মাস ধরে ভারতীয় তেল শোধনাগারগুলো রুশ তেল আমদানি কমাচ্ছে। কার্নেগি এনডাওমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, রিলায়েন্স অক্টোবর মাসে নিষিদ্ধ রুশ সংস্থা থেকে ক্রয়াদেশ ১৩ শতাংশ কমিয়েছে। এদিকে একই সময়ে সৌদি আরব থেকে আমদানি বেড়েছে ৮৭ শতাংশ এবং ইরাক থেকে ৩১ শতাংশ। ব্লুমবার্গ জানাচ্ছে, রাষ্ট্রীয় শোধনাগারগুলোও ডিসেম্বরের চুক্তির জন্য রুশ তেল এড়িয়ে যাচ্ছে।
গ্লোবাল ট্রেড অ্যান্ড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের অজয় শ্রীবাস্তবের মতে, ভারত যেহেতু রুশ তেল আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা পূরণ করেছে, তাই এখন ওয়াশিংটনের উচিত ভারতীয় পণ্যের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করা। নয়তো তা সদিচ্ছাকে ক্ষুণ্ন করবে এবং চলমান বাণিজ্য আলোচনাকে আরও জটিল করে তুলবে।
রাশিয়ার তেল ক্রয় ইস্যুতে বড় ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হলেও রিলায়েন্সের এই সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।



