ট্রাম্প–মামদানি বৈঠকে, সমালোচনা পেরিয়ে সহযোগিতার বার্তা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:১১ পিএম
হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে শুক্রবার (২১ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির হৃদ্যতাপূর্ণ বৈঠক যেন পুরো ঘটনাপ্রবাহের মোড় ঘুরিয়ে দিল।
গত কয়েক মাস ধরেই গণমাধ্যমের সামনে দুই বিপরীত মেরুর রাজনীতিবিদের মধ্যে তীব্র বিরোধ দেখা গেছে। অনেকে ধারণা করেছিল, ওই বৈঠকেও উত্তেজনা দেখা দেবে। কিন্তু যা ঘটল, তা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন—বৈঠক পরিণত হলো আন্তরিকতা, সৌজন্য আর প্রশংসার বিরল মিলনমেলায়।
দুই নেতা শান্ত স্বরে কথা বলেন এবং ইঙ্গিত দেন যে ভবিষ্যতে তারা একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। অথচ এতদিন ট্রাম্প মামদানিকে ‘কমিউনিস্ট’ বলেছিলেন, আর মামদানি ট্রাম্পকে ‘স্বৈরাচারী’ বলে সমালোচনা করতেন।
মুসলিম ও গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী (ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট) পরিচয়ের সাজানো নবনির্বাচিত মেয়র মামদানি রিপাবলিকান রাজনীতিতে ইতোমধ্যেই ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের এক বড় ‘ভয়ের কারণ’। ট্রাম্প একসময় তাকে কমিউনিস্ট আখ্যা দিয়ে নিউইয়র্ক সিটির ফেডারেল তহবিল বন্ধ করার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিলেন। তবুও বৈঠকের পরিবেশে এসবের কোনো প্রভাবই দেখা গেল না।
বৈঠকের সময় সাংবাদিকেরা বারবার অতীতের কটুক্তি ও মতবিরোধ তুলে ধরলেও দুই নেতা তা এড়িয়ে গিয়ে সাধারণ বিষয়গুলোতে ঐকমত্যের কথা বলেন। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার প্রশংসায় উদার ছিলেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি, তিনি কিছু কনজারভেটিভকে বিস্মিত করবেন। তার অনেক ধারণাই আমার ধারণার সঙ্গে মিলে যায়। ভাবনার চেয়ে অনেক বেশি বিষয়ে আমাদের মিল আছে। আমার বিশ্বাস, তিনি মেয়র হিসেবে সত্যিই দুর্দান্ত কিছু করতে পারবেন।’
সিটির তহবিল বন্ধের হুমকি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেন, তিনি মামদানিকে ক্ষতি নয়, বরং সহযোগিতা করার দিকেই ভাবছেন।
মামদানি কৌশলে ট্রাম্পকে সরাসরি সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকেন। মতবিরোধ নিয়ে কথা না বলে তিনি বারবার নিজের নির্বাচনী অগ্রাধিকার—জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো ও সাশ্রয়ী সুবিধা নিশ্চিত করার প্রসঙ্গ তোলেন। ইসরায়েল–গাজা ইস্যুতে নিজের বিতর্কিত মন্তব্যের প্রসঙ্গ উঠলে তিনি তা স্বীকার করে দ্রুত আলোচনাকে নির্বাচনী এজেন্ডায় ফিরিয়ে আনেন।
অভ্যন্তরীণ ও কূটনৈতিক নীতিতে ট্রাম্পকে সমর্থন না করলেও মামদানি বলেন, ‘জীবনযাত্রার ব্যয়ের ওপরে প্রেসিডেন্টের মনোযোগের কারণে অনেক নিউইয়র্কবাসী এ নির্বাচনে তাকে ভোট দিয়েছেন। আমি সেই সাশ্রয়ী এজেন্ডায় একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।’
‘ফ্যাসিস্ট’ মন্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন করলে ট্রাম্প হাসতে হাসতে বলেন, ‘ঠিক আছে, আপনি শুধু হ্যাঁ বললেই হলো! ব্যাখ্যার দরকার নেই।’ আর ‘স্বৈরশাসক’ বলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাকে এর চেয়েও খারাপ বলা হয়েছে।’
অবাক করার মতোভাবে ট্রাম্প নিউইয়র্ক রিপাবলিকান গভর্নর প্রার্থী এলিস স্টেফানিকের মামদানিকে ‘জিহাদি’ আখ্যা দেওয়া মন্তব্যও নাকচ করেন। তিনি বলেন, ‘না, আমি তা মনে করি না… প্রচারণার সময় এমন কথা বলাই হয়।’



