২০২৫ ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ বছরগুলোর একটি : জাতিসংঘ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৩৫ এএম
২০২৫ সাল ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ বছরগুলোর একটি হতে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। ২০২৩, ২০২৪ ও ২০২৫ সাল মিলিয়ে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে গরম তিন বছর হিসেবে রেকর্ডে থাকবে এই সময়কাল, যা পৃথিবীকে আরও গভীরভাবে ঠেলে দিচ্ছে জলবায়ু সংকটের দিকে।
বৃহস্পতিবার ৬ নভেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের আবহাওয়া বিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও) জানিয়েছে, সংস্থার ১৭৬ বছরের তাপমাত্রা রেকর্ড অনুযায়ী চলতি বছরটি দ্বিতীয় বা তৃতীয় সর্বোচ্চ উষ্ণ বছর হতে যাচ্ছে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় আগামী সপ্তাহে ব্রাজিলে শুরু হতে যাওয়া জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-৩০-এর প্রাক্কালে, যা বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ সতর্ক সংকেত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ডব্লিউএমও জানিয়েছে, বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের ঘনত্ব নতুন রেকর্ডে পৌঁছেছে, যা ভবিষ্যতের জন্য আরও বেশি তাপ ধরে রাখছে। ২০১৫ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত প্রতিটি বছরই ইতিহাসের ১১টি সবচেয়ে উষ্ণ বছরের মধ্যে থাকবে বলেও উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
সংস্থার মহাপরিচালক সেলেস্টে সাওলো বলেন, সবকিছু বিবেচনায় আগামী কয়েক বছরে বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখা এখন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী, শিল্পবিপ্লব-পূর্ব সময়ের তুলনায় বৈশ্বিক উষ্ণতা ২ ডিগ্রির নিচে এবং সম্ভব হলে ১.৫ ডিগ্রিতে সীমিত রাখার লক্ষ্য ছিল। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বিশ্ব ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে ডব্লিউএমও।
সাওলো আরও বলেন, অভূতপূর্ব উষ্ণতা এবং রেকর্ড গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধির ফলে এটা স্পষ্ট যে আমরা সাময়িকভাবে হলেও ১.৫ ডিগ্রির সীমা অতিক্রম করব। তবে বিজ্ঞান বলছে, শতাব্দীর শেষ নাগাদ তাপমাত্রা আবারও ১.৫ ডিগ্রিতে নামিয়ে আনা সম্ভব এবং তা করাই এখন জরুরি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম আট মাসে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা শিল্পবিপ্লব-পূর্ব সময়ের তুলনায় ১.৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। একই সময়ে মহাসাগর ও বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রাও পৌঁছেছে নতুন উচ্চতায়।
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি ইউএনইপি জানিয়েছে, গত বছর বিশ্বে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বেড়েছে ২.৩ শতাংশ, যার সবচেয়ে বড় অবদান ছিল ভারত, এরপর চীন, রাশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা মানবজাতির জন্য একটি নৈতিক ব্যর্থতা।
তিনি সতর্ক করে বলেন, ১.৫ ডিগ্রির ওপরে উষ্ণতা বৃদ্ধি মানে অর্থনীতি ধ্বংস, বৈষম্য বৃদ্ধি এবং অপ্রত্যাবর্তনীয় ক্ষতি। এখনই দ্রুত ও ব্যাপক পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে এই সীমা অতিক্রম যতটা সম্ভব কম, স্বল্পস্থায়ী ও নিরাপদ হয় এবং শতাব্দীর শেষে তাপমাত্রা আবার ১.৫ ডিগ্রির নিচে নামানো যায়।
ডব্লিউএমও জানিয়েছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব এখন আর্কটিক ও অ্যান্টার্কটিক অঞ্চলে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। এ বছর শীত শেষে আর্কটিকের বরফের বিস্তার ইতিহাসের সর্বনিম্নে নেমেছে, আর অ্যান্টার্কটিকার বরফও সারা বছর গড়ের নিচে ছিল।
২০২৫ সালের প্রথম আট মাসে পৃথিবীর নানা প্রান্তে ভয়াবহ বন্যা, দাবদাহ, দাবানলসহ জলবায়ুজনিত বহু দুর্যোগে জীবন, জীবিকা ও খাদ্যব্যবস্থায় বড় ধাক্কা লেগেছে বলেও জানিয়েছে ডব্লিউএমও।
তবে সংস্থাটি জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বহু দেশ বহুমুখী দুর্যোগ আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা তৈরিতে অগ্রগতি অর্জন করেছে। ২০১৫ সালে যেখানে মাত্র ৫৬টি দেশ এমন ব্যবস্থা চালু করেছিল, বর্তমানে সেই সংখ্যা বেড়ে ১১৯টিতে দাঁড়িয়েছে। অনুন্নত দেশ ও ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলো গত এক বছরেই ৫ শতাংশ অগ্রগতি দেখিয়েছে।
তবু বিশ্বের ৪০ শতাংশ দেশেই এখনো কোনো আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা নেই, যা অবিলম্বে দূর করা জরুরি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ডব্লিউএমও।



