বুসানে ট্রাম্প–শি বৈঠক: বাণিজ্যযুদ্ধের অবসানের নতুন বার্তা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১৫ এএম
দক্ষিণ কোরিয়ার বন্দরনগরী বুসানে আজ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতি—যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও শি জিনপিংয়ের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত বৈঠক শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিনের বাণিজ্যযুদ্ধের অবসান এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্থিতিশীলতা ফেরানোর আশায় এ বৈঠকের দিকে নজর ছিল পুরো বিশ্বের।
এটি ২০১৯ সালের পর দুই নেতার প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ট্রাম্প তাঁর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরের শেষ ধাপে বুসানে পৌঁছান এবং বৈঠক শুরুর আগে সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের বৈঠক অত্যন্ত সফল হবে, এতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। তবে তিনি (শি জিনপিং) খুব কঠিন আলোচক।
করমর্দনের সময় ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, বৃহস্পতিবারই হয়তো একটি বাণিজ্যচুক্তিতে স্বাক্ষর হতে পারে। অপরদিকে শি দোভাষীর মাধ্যমে বলেন, বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির মধ্যে কিছু মতপার্থক্য স্বাভাবিক। তবে আমাদের আলোচকেরা ইতিমধ্যে মূল উদ্বেগগুলোর বিষয়ে মৌলিক ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে চাই, যাতে চীন–যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের জন্য একটি দৃঢ় ভিত্তি গড়ে ওঠে।
বৈঠকের খবর ছড়িয়ে পড়তেই বৈশ্বিক বাজারে ইতিবাচক সাড়া পড়ে। ডলারের বিপরীতে ইউয়ানের মান এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে উঠে যায়, আর ওয়াল স্ট্রিট থেকে টোকিও পর্যন্ত শেয়ারবাজারে রেকর্ড উচ্চতা দেখা যায়। বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, বৈঠক সফল হলে বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমিত হয়ে বিশ্ববাজারে স্থিতিশীলতা ফিরবে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অস্থায়ী উষ্ণতা কত দিন স্থায়ী হবে তা অনিশ্চিত। সম্প্রতি চীন বিরল ধাতু রপ্তানিতে নতুন নিয়ন্ত্রণ আরোপের প্রস্তাব দিয়েছিল, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি শিল্পের জন্য বড় ধাক্কা হতে পারত। জবাবে ট্রাম্প চীনা পণ্যে ১০০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সফটওয়্যার ব্যবহৃত পণ্যের রপ্তানিতে সীমাবদ্ধতা আনারও ঘোষণা দেন।
সর্বশেষ দুই দেশের বাণিজ্য আলোচকেরা এক বছরের জন্য বিরল ধাতু রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ স্থগিত রাখার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানান। একইসঙ্গে চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন কেনা পুনরায় শুরু করেছে, যা উভয় দেশের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোগত চুক্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল করেছে।
হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, বুসান বৈঠকটি ভবিষ্যতে ট্রাম্প ও শির মধ্যে আরও কয়েক দফা বৈঠকের পথ তৈরি করতে পারে। এ ছাড়া ফেন্টানিল নামের প্রাণঘাতী মাদকের কাঁচামাল রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ এবং টিকটকের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কার্যক্রম বিক্রির সম্ভাব্য চুক্তি নিয়েও আলোচনা চলছে।
বিশ্বজুড়ে ব্যবসায়ী মহল গভীর মনোযোগে এই বৈঠকের ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছে, কারণ এর সফলতা শুধু দুই দেশের নয়—বিশ্ব অর্থনীতির দিকনির্দেশনাও নির্ধারণ করতে পারে।



