দুই বছরের যুদ্ধ শেষে গাজা ৬ কোটি টন ধ্বংসাবশেষে চাপা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০৮ পিএম
দুই বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে গাজা এখন এক ভয়াবহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, অঞ্চলটি বর্তমানে ৬ কোটি ১০ লাখ টনেরও বেশি ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়েছে। গাজার মোট ভবনের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন ও অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপের মুখে চলতি বছরের ১০ অক্টোবর কার্যকর হয় ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি। এটি হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘ দুই বছরের ভয়াবহ সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে গাজা পুনর্গঠনের পথ খুলে দেয়। তবে পুনর্গঠনের সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই বিপুল পরিমাণ ধ্বংসাবশেষ।
২০২৫ সালের ৮ জুলাই পর্যন্ত ইসরায়েলি সেনাবাহিনী প্রায় ১ লাখ ৯৩ হাজার ভবন আংশিক বা সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছে। জাতিসংঘের স্যাটেলাইট ডেটা বিশ্লেষণ সংস্থা ইউএনওস্যাটের তথ্যমতে, এটি গাজার মোট স্থাপনার প্রায় ৭৮ শতাংশ। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে তোলা গাজা সিটির সর্বশেষ স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, সেখানে ৮৩ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা সম্পূর্ণ ধ্বংস।
গাজার এই ধ্বংসস্তূপের ওজন প্রায় ৬ কোটি ১৫ লাখ টন—যা নিউইয়র্কের এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের ওজনের প্রায় ১৭০ গুণ। প্রতি বর্গমিটারে জমেছে গড়ে ১৬৯ কেজি ধ্বংসাবশেষ।
জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) জানিয়েছে, যুদ্ধের প্রথম পাঁচ মাসেই এই ধ্বংসাবশেষের দুই-তৃতীয়াংশ তৈরি হয়। যুদ্ধবিরতির আগের কয়েক মাসে ধ্বংসযজ্ঞ আরও বেড়ে যায়। ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে শুধু রাফাহ ও খান ইউনিসের মধ্যবর্তী এলাকায় প্রায় ৮০ লাখ টন ধ্বংসাবশেষ সৃষ্টি হয়।
ইউএনইপির আগস্টে প্রকাশিত বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এসব ধ্বংসাবশেষ এখন গাজার জনগণের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে উঠেছে। অন্তত ৪৯ লাখ টন ধ্বংসাবশেষ পুরোনো ভবনের অ্যাসবেস্টসে দূষিত, বিশেষ করে শরণার্থীশিবিরঘেঁষা অঞ্চলগুলো—উত্তরের জাবালিয়া, মধ্যাঞ্চলের নুসেইরাত ও আল-মাঘাজি, এবং দক্ষিণের রাফাহ ও খান ইউনিসে।
এ ছাড়া আরও ২৯ লাখ টন ধ্বংসাবশেষ শিল্পাঞ্চল থেকে আসা বিপজ্জনক বর্জ্যে দূষিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দুই বছরের যুদ্ধের তীব্র বোমাবর্ষণে এখন পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৬৮ হাজার ২৮০ জন—যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক মানুষ। এই সংখ্যা হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া, যা জাতিসংঘ নির্ভরযোগ্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।



