যুদ্ধবিরতির দুই সপ্তাহ পরও গাজায় ভয়াবহ ক্ষুধা সংকট
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১১:০৫ এএম
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও সেখানে ক্ষুধা ও অপুষ্টির পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ রূপে বজায় রয়েছে। ইসরায়েলের বাধায় পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে না পারায় খাদ্যসংকট আরও গভীর হচ্ছে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।
আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, অবরুদ্ধ গাজায় এখন যে পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী ঢুকছে, তা জনগণের ন্যূনতম পুষ্টির চাহিদা পূরণেও অপ্রতুল। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, তাদের প্রতিদিন দুই হাজার টন ত্রাণ সরবরাহের লক্ষ্য থাকলেও বাস্তবে তা ৭৫০ টনেরও কমে নেমে এসেছে। বর্তমানে ইসরায়েল কেবল দুটি সীমান্তপথ খোলা রেখেছে, যা দিয়ে পর্যাপ্ত ত্রাণ প্রবেশ সম্ভব হচ্ছে না।
ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলেন, পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ। যা ত্রাণ ঢুকছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য। ক্ষুধা ও অপুষ্টির অবসান ঘটার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
জাতিসংঘের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গাজার অন্তত এক-চতুর্থাংশ জনগণ অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন, যার মধ্যে রয়েছেন ১১ হাজার ৫০০ গর্ভবতী নারী। সংস্থাটি সতর্ক করেছে, এই সংকট গাজায় পুরো এক প্রজন্মের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) উপ-নির্বাহী পরিচালক অ্যান্ড্রু স্যাবারটনের মতে, এখন গাজায় জন্ম নেওয়া ৭০ শতাংশ শিশুই সময়ের আগে বা কম ওজন নিয়ে জন্মাচ্ছে—যেখানে ২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে এই হার ছিল মাত্র ২০ শতাংশ। তিনি বলেন, অপুষ্টির প্রভাব শুধু মায়ের ওপর নয়, নবজাতকের জীবনেও ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে।
গাজার স্থানীয় এনজিও পিএআরসি–এর বিদেশি সম্পর্কবিষয়ক পরিচালক বাহা জাকউত বলেন, যুদ্ধবিরতির দুই সপ্তাহ পরও বাণিজ্যিক ট্রাকে বিস্কুট, চকলেট, কোমল পানীয় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু বীজ বা জলপাইয়ের মতো পুষ্টিকর খাদ্যসামগ্রী নিষিদ্ধ। এর ফলে শিশু, নারী ও দুর্বল জনগোষ্ঠীর পুষ্টিচাহিদা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এক কেজি টমেটোর দাম বেড়ে ১ শেকেল থেকে ১৫ শেকেল (প্রায় ৪.৫ ডলার) পর্যন্ত পৌঁছেছে বলে তিনি জানান।
এমন পরিস্থিতিতে অক্সফাম, নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলসহ ৪১টি আন্তর্জাতিক সংস্থা এক যৌথ বিবৃতিতে অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল নির্বিচারে গাজামুখী ত্রাণবাহী চালান আটকে দিচ্ছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬৮ হাজার ২৮০ জন নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৭৫ জন আহত হয়েছেন।



