Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

যুদ্ধবিরতি চুক্তি: মধ্যপ্রাচ্যে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা

Icon

অনলাইন ডেস্ক :

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩০ পিএম

যুদ্ধবিরতি চুক্তি: মধ্যপ্রাচ্যে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা

ছবি : সংগৃহীত

অনেক মার্কিন প্রেসিডেন্টই ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে শান্তির অগ্রগতি আনার চেষ্টা করেছেন। গাজায় অবিরাম হত্যাযজ্ঞের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই অল্পসংখ্যক নেতাদের তালিকায় যুক্ত হয়েছেন, যারা বাস্তবে কোনো সাফল্য পেয়েছেন।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির প্রাথমিক চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের জন্য এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উন্মোচন করেছে। পথটি সংকীর্ণ হলেও এটি ১৯৯৩ ও ১৯৯৫ সালের অসলো চুক্তির পর থেকে টেকসই শান্তির সবচেয়ে বড় সম্ভাবনা।

এই নতুন দৃষ্টিভঙ্গি অসলো-পরবর্তী অচল ধারণা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এটি মানচিত্র আর দুই রাষ্ট্রের তাত্ত্বিক অন্তহীন আলোচনার পরিবর্তে বাস্তবভিত্তিক একটি পথ দেখায়। গাজা যখন পুনর্গঠিত হবে, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রভাবমুক্ত হবে, তখন ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিরা বুঝবেসহাবস্থান ধ্বংসের চেয়ে বেশি লাভজনক। এই সাফল্য কোনো হোয়াইট হাউজের আনুষ্ঠানিক চুক্তিপত্র নয়, বরং বছরের পর বছর ধরে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ, পশ্চিম তীরে সহিংস ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের নিয়ন্ত্রণ, রকেট হামলার হুমকি হ্রাস এবং মানুষদের মধ্যে শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতি ক্রমবর্ধমান বিশ্বাসের প্রতিফলন।

এই শান্তিচুক্তি ট্রাম্পের চাপ প্রয়োগমূলক ও বাস্তববাদী কূটনীতির এক বড় সাফল্য। মিশরের শার্ম আল-শেখে উভয় পক্ষ যখন আলোচনায় ব্যস্ত ছিল তখন যুক্তরাষ্ট্র, মিশর, কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতাকারীরা চাপ প্রয়োগ করছিলেন। যদিও সব বিবরণ প্রকাশ পায়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে, হামাস অবশিষ্ট ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে, বিনিময়ে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি বন্দিদের ছেড়ে দেবে, মানবিক সহায়তা প্রবাহিত হবে এবং ইসরায়েলি সেনারা গাজার প্রধান শহরগুলো থেকে আংশিকভাবে সরে যাবে

ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনা অনুযায়ী, পরবর্তী ধাপে হামাস-বিহীন একটি সরকার গাজা পুনর্গঠন করবে, আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী নিরাপত্তা দেবে, আর ট্রাম্প নিজে তদারকি বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকবেন যতদিন না ফিলিস্তিনিরা পূর্ণ দায়িত্ব নিতে সক্ষম হয়। চূড়ান্ত লক্ষ্যইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের মধ্যে চিরস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা।

তবে চ্যালেঞ্জও বিশাল। হামাসের নিরস্ত্রীকরণসহ নানা বিষয়ে উভয় পক্ষের মতভেদ রয়ে গেছে। গাজা প্রায় ৭৮ শতাংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায় পুনর্গঠন কঠিন হবে। সবচেয়ে বড় বাধা হলোইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শান্তির প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে যাওয়া।

অসলো চুক্তির তিন দশক পর এবং ৭ অক্টোবরের ঘটনার পর অধিকাংশ ইসরায়েলি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও ঘৃণার এক ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে দেখে। ২০১২ সালে যেখানে ৬১ শতাংশ ইসরায়েলি দুই রাষ্ট্র সমাধানকে সমর্থন করেছিল, এখন তা নেমে এসেছে মাত্র এক-চতুর্থাংশে। অন্যদিকে, ফিলিস্তিনিদের বড় অংশ ইসরায়েলকে দখলদার ও দমনমূলক রাষ্ট্র হিসেবে দেখে। মে মাসের এক জরিপে দেখা গেছে, ৫০ শতাংশ ফিলিস্তিনি ৭ অক্টোবরের হামলাকে সমর্থন করেছে এবং ৮৭ শতাংশ হামাসের নৃশংসতা অস্বীকার করেছে।

তবু আশার আলো রয়েছে। যুদ্ধের অবসান দুই পক্ষেই নেতৃত্ব পরিবর্তনের সুযোগ এনে দিতে পারেইসরায়েলে এক বছরের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে, যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনঞ্জামিন নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক অধ্যায়ের অবসান ঘটাতে পারে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পরিস্থিতি অনুকূল। বিশ্ব এখন শান্তির দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। ট্রাম্প, যিনি ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে দ্বিধা করেন না, এই মুহূর্তে একটি প্রভাবশালী মধ্যস্থতাকারী। ইরান ও তার প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোর দুর্বল অবস্থানও অঞ্চলে স্থিতিশীলতার সুযোগ বাড়িয়েছে। উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলো গাজার পুনর্গঠন ও শান্তি প্রক্রিয়ায় অর্থনৈতিক সহায়তা দিতে রাজিএটি বিশাল ইতিবাচক পদক্ষেপ।

তবে উভয় পক্ষের উগ্র মনোভাব নিয়ন্ত্রণ করতে বাইরের শক্তিদের সক্রিয় থাকতে হবে। ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ রোধ, ফিলিস্তিনি প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং সহিংসতা দমন করা জরুরি। অন্যদিকে, আরব রাষ্ট্রগুলোকে ফিলিস্তিনিদের অহিংসার পথে আনতে ও প্রশাসনিক সংস্কার ত্বরান্বিত করতে হবে।

দীর্ঘমেয়াদে লক্ষ্য হতে পারে একটি নতুন আঞ্চলিক নিরাপত্তা কাঠামোযেখানে ইসরায়েল ও আরব রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতা গভীরতর হবে, ২০২০ সালের আব্রাহাম চুক্তির ভিত্তিতে। এটি সিরিয়া ও লেবাননের সঙ্গেও নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে, যারা ইরানের প্রভাব থেকে ক্রমে মুক্ত হচ্ছে।

সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু হলো গাজা। বিশ্ব দেখবে, ইসরায়েল কি সত্যিই আন্তর্জাতিক সহায়তায় গাজার নতুন প্রশাসন গঠনে রাজি হয়, এবং গাজার ফিলিস্তিনিরা কি আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সশস্ত্রগোষ্ঠীমুক্ত শাসন দেখাতে পারে।

ট্রাম্প যেভাবে যুদ্ধবিরতি আনতে সক্ষম হয়েছেনচাপ, তাগিদ ও চরম বাস্তববোধে ভর করেসেই কৌশল দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় যথেষ্ট নাও হতে পারে। তবুও, এক অবিরাম রক্তপাতের অঞ্চলে এটি এক বিরল মুহূর্ত, একটি ক্ষীণ হলেও বাস্তব সম্ভাবনা, নতুন সূচনার।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন