গাজায় ছড়িয়ে পড়ছে দুর্ভিক্ষ, জাতিসংঘের সতর্কবার্তা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৫, ০৯:৪৪ এএম
ছবি : সংগৃহীত
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে দুর্ভিক্ষ। জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, এই সংকট এখন আর আশঙ্কা নয়, বরং বাস্তবতা। এরই মধ্যে অনাহার ও অপুষ্টিতে আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে দুটি শিশু রয়েছে। এতে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১৩ জনে, যার মধ্যে ১১৯ শিশু।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক উপপ্রধান জয়েস মুসুইয়া জানিয়েছেন, উত্তর-মধ্য গাজায় বিশেষ করে গাজা সিটিতে দুর্ভিক্ষ নিশ্চিত হয়েছে। সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ এটি দক্ষিণের দেইর আল-বালাহ ও খান ইউনিসে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বর্তমানে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ অনাহার ও মৃত্যুর ঝুঁকিতে আছেন; সেপ্টেম্বরের শেষে এই সংখ্যা ৬ লাখ ৪০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
তিনি আরও জানান, পাঁচ বছরের কম বয়সী অন্তত ১ লাখ ৩২ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ৪৩ হাজার শিশু আগামী মাসগুলোতে জীবন সংকটে পড়বে। মুসুইয়ার ভাষায়, এটি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, বরং সম্পূর্ণ মানবসৃষ্ট এক বিপর্যয়, যা সংঘাতের কারণে প্রাণহানি, ধ্বংসযজ্ঞ ও বাস্তুচ্যুতি ডেকে এনেছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েল গাজার দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ সমর্থিত আইপিসি–র প্রতিবেদন প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। তারা প্রতিবেদনটিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ ও অপেশাদার’ বলে অভিহিত করেছে। তবে নিরাপত্তা পরিষদের যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বাকি ১৪ সদস্য দেশ প্রতিবেদনটির প্রতি সমর্থন জানিয়ে যৌথ বিবৃতিতে গাজায় দুর্ভিক্ষ অবসান এবং অবিলম্বে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।
শিশু সুরক্ষা সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন–এর প্রধান ইঙ্গার অ্যাশিং নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া বক্তব্যে বলেছেন, গাজায় দুর্ভিক্ষ এসে গেছে— এটি ইচ্ছাকৃতভাবে সৃষ্ট মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ। গাজার শিশুদের পরিকল্পিতভাবে অনাহারে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ক্ষুধাকে ব্যবহার করা হচ্ছে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে।
তিনি আরও বলেন, গাজার ক্লিনিকগুলো কঙ্কালসার শিশুতে ভর্তি। তারা এতটাই দুর্বল যে ব্যথায় কাঁদতেও পারছে না। অনেকেই নিস্তব্ধ হয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগোচ্ছে। আগে শিশুদের আঁকায় শান্তি ও ভবিষ্যতের স্বপ্ন ফুটে উঠত, এখন তারা শুধু খাবারের ছবি আঁকে। এমনকি মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষাও প্রকাশ করছে।
অ্যাশিং একটি শিশুর লেখা উদ্ধৃত করে বলেন: ইশ, আমি যদি আমার মায়ের কাছে স্বর্গে থাকতে পারতাম। সেখানে ভালোবাসা আছে, খাবার আছে, পানি আছে।



