ভারতের রপ্তানির ৭০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের আওতায়
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৫, ০৩:০০ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। এর ফলে ভারতের রপ্তানির প্রায় ৭০ শতাংশ, যার আর্থিক মূল্য ৬০ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের আওতায় পড়েছে। ভারতীয় আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক গবেষণা পরিষদ (আইসিআরআইইআর)-এর প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এই পরিমাণ ভারতের জিডিপির মাত্র ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং মোট রপ্তানির ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ। সরাসরি অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ না হলেও শুল্কের আঘাত পড়বে শ্রমঘন ও উচ্চমূল্যের খাতগুলোতে— বিশেষ করে টেক্সটাইল ও পোশাক, রত্ন ও গয়না, গাড়ির যন্ত্রাংশ এবং কৃষিপণ্য (চিংড়ি রপ্তানি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত)।
আইসিআরআইইআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টেক্সটাইল ও পোশাক খাত এখন প্রতিযোগী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি শুল্ক বৈষম্যের মুখে পড়বে। রত্ন ও গয়নার খাত (রপ্তানি আয় ১১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার) তুরস্ক, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের তুলনায় অসুবিধায় পড়বে। কৃষিপণ্যে বিশেষ করে চিংড়ি রপ্তানি মারাত্মক সংকটে পড়বে, কারণ ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র অ্যান্টি-ডাম্পিং ও কাউন্টারভেইলিং শুল্ক আরোপ করেছে।
প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, এসব খাতের লাখ লাখ শ্রমিক ও কৃষকের জীবিকা হুমকির মুখে পড়তে পারে। মার্কিন আমদানিকারকেরা সহজেই বিকল্প সরবরাহকারী বেছে নিতে পারে, যা ভারতের দর–কষাকষির ক্ষমতা কমিয়ে দেবে।
এর আগে ট্রাম্প প্রথমে ভারতীয় পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন। অন্তর্বর্তী চুক্তির আশা থাকলেও পরে আরও ২৫ শতাংশ যোগ করে মোট শুল্ক দাঁড় করান ৫০ শতাংশে। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি চালিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতির আওতার বাইরে রাখা হয়েছে ওষুধ, জ্বালানি, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও সেমিকন্ডাক্টর খাত। তবে প্রতিযোগী দেশগুলো— যেমন ভিয়েতনাম (২০ শতাংশ), বাংলাদেশ (২০ শতাংশ), ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইনস (১৯ শতাংশ) এবং জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া (১৫ শতাংশ)— তুলনামূলক কম শুল্ক সুবিধা ভোগ করছে।
ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল পার্লামেন্টে জানিয়েছেন, শুল্কের প্রভাব খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও জানায়, ভারতীয় ভোক্তাদের জন্য সাশ্রয়ী জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতেই রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে।
ভারত সরকারের ভাষ্য, যেকোনো বড় অর্থনীতির মতো আমরাও জাতীয় স্বার্থ ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেব। যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত অন্যায্য ও অযৌক্তিক।



