যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন
সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৫, ১২:২৫ পিএম
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তনের পর বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল হলেও কিছু বিষয়ে উদ্বেগ এখনও বিদ্যমান। দেশের ২০২৪ সালের পরিস্থিতি নিয়ে এমন তথ্য উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনে। মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, ছাত্র আন্দোলন ও সহিংসতায় শত শত মানুষের মৃত্যুর পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন। ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়, যা স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি সাবেক সরকারের আমলে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তদন্তে কাজ শুরু করেছে।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড
সাবেক সরকারের সময় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অসংখ্য অভিযোগ থাকায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তদন্ত শুরু করেছে। স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা এইচআরএসএস-এর তথ্যমতে, ১৬ জুলাই থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তত ৯৮৬ জন নিহত হয়েছেন। আর ‘স্টুডেন্টস অ্যাগেইনস্ট ডিসক্রিমিনেশন’-এর হিসাব অনুযায়ী নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ৪২৩ জন, আহত ২২ হাজার। নিহতদের বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন, এবং ৭০ শতাংশের বয়স ছিল ৩০ বছরের নিচে। সরকার ৭০৮ জনের একটি প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করে আরও সঠিক তথ্যের জন্য জনসাধারণের সহযোগিতা চেয়েছে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকার
সাবেক সরকারের সময় মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় কঠোর বিধিনিষেধ, সাংবাদিকদের হয়রানি ও স্ব-আরোপিত সেন্সরশিপ ছিল। ডিএসএ ও সিএসএ আইনে অসংখ্য মামলা হয়েছিল সরকারের সমালোচকদের বিরুদ্ধে। সেপ্টেম্বর মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব আইনে দায়ের করা ১ হাজারের বেশি বাকস্বাধীনতা-সম্পর্কিত মামলা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় এবং আটক ব্যক্তিদের মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করে। তবে সরকার পরিবর্তনের পর সাবেক সরকারের সমর্থক হিসেবে বিবেচিত ১৬৭ সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল এবং কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।
শ্রমিক অধিকার ও কর্মপরিবেশ
সাবেক সরকারের আমলে ইউনিয়ন গঠনের স্বাধীনতা সীমিত ছিল, বিশেষ করে ইপিজেড অঞ্চলে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত কর্মক্ষেত্রের দুর্ঘটনায় ৪৭৫ জন শ্রমিক নিহত হন। সেপ্টেম্বরে জাহাজ ভাঙা কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে সাতজন নিহত হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে।
গুম ও দীর্ঘস্থায়ী আটক
গুমের অভিযোগ তদন্তে সরকার একটি কমিশন গঠন করেছে, যা ইতিমধ্যে ঢাকায় ও আশপাশে আটটি গোপন বন্দিশালা চিহ্নিত করেছে এবং ১,৬০০টিরও বেশি অভিযোগ পেয়েছে। কিছু নিখোঁজ ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হলেও প্রায় ১০০ জনের সন্ধান এখনো মেলেনি।
শরণার্থী সুরক্ষা
বাংলাদেশ ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। ২০২৪ সালে মিয়ানমারে সহিংসতা বৃদ্ধির পর নতুন করে ৬৪ হাজার রোহিঙ্গা এসেছে। ভাসান চরে বর্তমানে ৩৬ হাজার ৫৯৩ জন রোহিঙ্গা বসবাস করছে এবং সরকার ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী তাদের সুরক্ষা ও সেবা দিচ্ছে।
ট্রান্সন্যাশনাল দমন-পীড়ন
সাবেক সরকারের আমলে বিদেশে অবস্থানরত সমালোচক ও কর্মীদের ওপর চাপ প্রয়োগের অভিযোগ থাকলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে এ ধরনের ঘটনা রিপোর্ট হয়নি। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে প্রতিবাদ করায় আটক ৫৪ জন বাংলাদেশিকে সরকারের আলোচনায় মুক্তি দেওয়া হয়।



