দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনার নতুন মোড় : ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ, আরআইসি জোটের পুনর্জাগরণ এবং সামরিক হুমকি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৫, ০১:০৫ পিএম
দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক আকাশে ঝড়ের গতি তীব্রতর হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, ফলে ভারতীয় পণ্যের ওপর মোট শুল্ক এখন ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে। এই পদক্ষেপকে অনেকে ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক আক্রমণ হিসেবে দেখছেন, যার বার্তা স্পষ্ট—যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বাইরে যাওয়ার মূল্য দিতে হবে।
ট্রাম্পের এই ঘোষণা বাংলাদেশে কিছু মহলের মধ্যে উল্লাসের সৃষ্টি করলেও, অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদেরা সতর্ক করেছেন যে এই উল্লাস ক্ষণস্থায়ী হতে পারে। কারণ, এর পেছনে লুকিয়ে আছে জটিল ভূ-রাজনৈতিক খেলা, যা দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করতে পারে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া : সমঝোতা না জোট গঠন?
ভারত এই অর্থনৈতিক আগ্রাসনের জবাবে কোন পথ নেবে? ওয়াশিংটনের সঙ্গে সমঝোতার পথে হাঁটবে, নাকি রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে মিলে ‘আরআইসি’ (রাশিয়া-ইন্ডিয়া-চায়না) জোটকে পুনরুজ্জীবিত করে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নতুন শক্তি-কেন্দ্র গড়ে তুলবে? রুশ বার্তা সংস্থা ইজভেস্তিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই রুদেনকো এই জোটের পুনর্জাগরণে আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘আমরা ভারত ও চীনের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছি। এই জোট আমাদের কৌশলগত অংশীদারিত্বের ঐতিহাসিক কাঠামো, যা ব্রিকসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে সহযোগিতার ভিত্তি।’
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ানও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এই সহযোগিতা শুধু তিন দেশের স্বার্থেই নয়, বরং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি ও উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
পাকিস্তানের সামরিক হুমকি
এদিকে, পাকিস্তানি সেনাপ্রধান আহমেদ শরিফের হুমকি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। তিনি ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর প্রতিশোধ হিসেবে ভারতের পূর্ব সীমান্তে সামরিক হামলার ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা সরাসরি বাংলাদেশের সীমান্তকে ইঙ্গিত করে। এই হুমকি এমন এক সময়ে এলো, যখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে নাটকীয় পালাবদল ঘটেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে এবং এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ‘রেজিম চেইঞ্জ’ অপারেশনের ছায়া দেখা যাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই রেজিম চেইঞ্জের মূল লক্ষ্য বাংলাদেশ নয়, বরং ভারত ও চীনের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। ভারত, যিনি দক্ষিণ এশিয়ার প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে পরিচিত, এই পরিবর্তন রুখতে ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা, বিশেষ করে সেভেন সিস্টার্স অঞ্চল, হুমকির মুখে পড়তে পারে।
বাংলাদেশ : কৌশলগত যুদ্ধক্ষেত্র
বাংলাদেশ এখন পরাশক্তিদের কৌশলগত খেলার মঞ্চে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের ফলে ভারতীয় পণ্যের তুলনায় বাংলাদেশের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে ২০ শতাংশ শুল্কহারে রপ্তানির সুযোগ পাচ্ছে, যা অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনা তৈরি করছে। তবে এই সুযোগের পাশাপাশি সামরিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার ঝুঁকিও বাড়ছে।
ভারতের চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ
ভারত এখন দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক চাপ, অন্যদিকে পাকিস্তান ও সম্ভাব্য বাংলাদেশের সামরিক হুমকি। এই পরিস্থিতিতে ভারত কি নিষ্ক্রিয় দর্শক হয়ে থাকবে, নাকি আরআইসি জোটের মাধ্যমে নতুন কৌশল গ্রহণ করবে? দক্ষিণ এশিয়ার এই দাবার বোর্ডে ভারতের পরবর্তী চালই নির্ধারণ করবে এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ।



