গাজা পুরো দখলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেতানিয়াহুর
অনলাইন ডেস্ক :
প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২৫, ০৭:৪৪ পিএম
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা পুরোপুরি দখলের পরিকল্পনা ঘোষণা করতে চলেছেন। ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে একথা বলা হয়েছে।
নেতানিয়াহুর এই সিদ্ধান্তের ফলে গাজাজুড়ে সামরিক অভিযান আরও বাড়াবে ইসরায়েলি বাহিনী।
এর মধ্যে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের যেসব এলাকায় রাখা হয়েছে, সেই এলাকাগুলোও থাকবে।
আই২৪নিউজ, দ্য জেরুজালেম পোস্ট, চ্যানেল ১২, ওয়াইনেট ও আল-জাজিরা সোমবার এ খবর জানিয়েছে।
নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে চ্যানেল ১২-এর প্রধান রাজনৈতিক বিশ্লেষক আমিত সেগা বলেছেন, ‘সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, “পূর্ণ আত্মসমর্পণ ছাড়া হামাস আর কোনও জিম্মি মুক্ত করবে না। আর আমরা আত্মসমর্পণ করব না। এখনই পদক্ষেপ না নিলে জিম্মিরা অনাহারে মারা যাবে। আর গাজা হামাসের নিয়ন্ত্রণেই রয়ে যাবে।”
গাজা দখলের নেতানিয়াহুর পরিকল্পনার খবরের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন রুখে দাঁড়াতে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
বিষয়টি নিয়ে নেতানিয়াহুর কার্যালয় কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও মন্তব্য করেনি।
গণমাধ্যমের এই প্রতিবেদন এমন সময়ে এল যখন মঙ্গলবার ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। অবরুদ্ধ গাজায় চলমান যুদ্ধ দুই বছরের কাছাকাছি সময়ে পৌঁছানোর এই সময়ে পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা করতে এই বৈঠক ডাকা হয়েছে।
ইসরায়েলের হামলা ও দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতিতে গাজায় নিহতের সংখ্যা বাড়তে থাকার মধ্যে ভূখন্ডটিতে আরও ত্রাণসহায়তা প্রবেশেন সুযোগ করে দিতে এবং যুদ্ধ বন্ধ করতে নেতানিয়াহুর ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে।
গাজার চিকিৎসা সূত্রের হিসাবে, ইসরায়েলের হামলায় সোমবার একদিনেই গাজায় অন্তত ৭৪ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৬ জনই ছিল ত্রাণ সংগ্রহে যাওয়া মানুষ।
হামাসের হাতে থাকা বাকি জিম্মিদের মুক্ত করে আনার নিশ্চয়তা চেয়ে ইসরায়েলের ভেতরেও চাপে আছেন নেতানিয়াহু। সম্প্রতি এক জিম্মির শীর্ণ চেহারার ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর এই চাপ আরও বেড়েছে।
সোমবার হামাসকে নিরস্ত্র করাসহ তাদের হাতে থাকা বাকি জিম্মিদের মুক্ত করার লক্ষ্যের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন নেতানিয়াহু।
মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে তিনি বলেন, “যুদ্ধের লক্ষ্য পূরণে আমাদেরকে একতাবদ্ধ থেকে একসঙ্গে লড়তে হবে। এই লক্ষ্য হচ্ছে, শত্রুর পরাজয়, জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজা আর ইসরায়েলের জন্য হুমকি নয় সেটি নিশ্চিত করা।”
ওদিকে, হামাসের ঊর্ধবতন নেতা ওসামা হামদান যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের নৃশংসতায় চোখ বুজে থাকার অভিযোগ তুলেছেন।
তিনি বলেন, একগুঁয়েমি, ঔদ্ধত্য, যুদ্ধবিরতি চুক্তি করা নিয়ে ছল-চাতুরি, বিধ্বংসী যুদ্ধ বাড়ানো এবং আমাদের মানুষজনকে অনাহারে রাখার কারণে ইসরায়েলি জিম্মিদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলার দায় পুরোপুরি নেতানিয়াহু সরকারের ওপরই বর্তায়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবমতে, গাজায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলা যুদ্ধে ৬০ হাজার ৯৩০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা অন্তত ১৮ হাজার ৪৩০।



