গাজায় দুর্ভিক্ষে প্রথমবারের মতো সরব ট্রাম্প, ইসরায়েলকে ‘প্রতি আউন্স খাবার’ পৌঁছানোর আহ্বান
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৫, ১১:৩৩ এএম
ছবি : সংগৃহীত
গাজায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কথা এবার প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্রিটেন সফরের সময় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ইসরায়েলকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যেন গাজায় "প্রতি আউন্স খাবার" প্রবেশ করে।
এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দাবির বিরোধিতা করেন, যেখানে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, “গাজায় কোনো দুর্ভিক্ষ নেই।” ট্রাম্প জানান, তিনি নিজ চোখে দেখে বুঝেছেন গাজায় শিশুরা ক্ষুধায় কাতর। “এটা সত্যিকারের দুর্ভিক্ষ,” মন্তব্য করেন তিনি।
সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলি অবরোধের ফলে গাজায় খাদ্য, চিকিৎসা ও মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা। এ পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে যেন তিনি মানবিক হস্তক্ষেপের পথে এগোন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে ৭০ মিনিটব্যাপী যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প বলেন, “আমি চাই নেতানিয়াহু নিশ্চিত করুক—ওরা যেন প্রতিটি আউন্স খাবার পায়।” একইসঙ্গে তিনি হামাসের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়ায় সংলাপ অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
সংবাদ সম্মেলনে স্টারমার জানান, গাজা এখন ‘সম্পূর্ণ বিপর্যয়ের’ মুখে এবং ব্রিটিশ জনগণ এই দৃশ্য দেখে ‘ঘৃণাভরে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে’। তার আহ্বান, “এখনই যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন।”
এদিকে, ইসরায়েল ঘোষণা দিয়েছে—গাজার তিনটি অঞ্চলে প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা করে যুদ্ধবিরতি থাকবে এবং ত্রাণ পৌঁছানোর জন্য নিরাপদ পথ খোলা হবে। তবে বাস্তবে এসব পদক্ষেপ কতটা কার্যকর তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
সোমবার দক্ষিণ গাজায় একটি ত্রাণবাহী ট্রাকের পাশে জড়ো হওয়া মানুষের ওপর গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে, যাতে অন্তত ২৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, ৫৫টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করলেও ক্ষুধার্ত জনতা সেগুলো লুট করে নেয় এবং কোনটি নির্ধারিত গুদামে পৌঁছাতে পারেনি।
স্টারমার জানিয়েছেন, তিনি ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে একটি যৌথ শান্তি পরিকল্পনা প্রস্তুত করেছেন, যা মঙ্গলবার বিকেলে জরুরি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। পাশাপাশি ব্রিটিশ এমপি ও মন্ত্রীরা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাখোঁ আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাজ্য বা অন্য মিত্ররা চাইলে ওই সিদ্ধান্ত নিতে পারে, যদিও যুক্তরাষ্ট্র এই মুহূর্তে তা সমর্থন করছে না।
ট্রাম্প আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা গাজায় ‘ওয়াক-ইন’ খাদ্যকেন্দ্র স্থাপন করবে, যেখানে বাধাহীনভাবে ক্ষুধার্ত মানুষ সহায়তা নিতে পারবে—তবে কীভাবে তা বাস্তবায়িত হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত দেননি তিনি।



