
প্রিন্ট: ২০ জুলাই ২০২৫, ০৯:০৫ এএম
দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৫, ১১:২৯ এএম

ছবি : সংগৃহীত
১২ দিনের সংঘর্ষের পর ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। তবে ইরান এটিকে টেকসই শান্তি নয়, বরং একটি কৌশলগত বিরতি হিসেবে বিবেচনা করছে। দীর্ঘদিন ধরে অনুসৃত ‘স্ট্র্যাটেজিক পেশেন্স’ বা কৌশলগত ধৈর্যের নীতির ধারাবাহিকতায়, তেহরান এখন নিজেদের সামরিক ও কূটনৈতিক শক্তি পুনর্গঠনের পথে এগোচ্ছে এবং ভবিষ্যতের দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
যদিও ইসরায়েল এই যুদ্ধের পর জয় দাবি করেছে, ইরানও এটিকে চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত করে নিজেদের কৌশলগত সফলতা হিসেবে ব্যাখ্যা করছে। ইরান মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্রের মৌন সম্মতিতে সংঘটিত এই যুদ্ধ অনেকটা ইরান-ইরাক যুদ্ধের স্মৃতিকে পুনরায় সামনে নিয়ে এসেছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই ইরান বিশ্বাস করে, সময় ও কৌশলের মাধ্যমে বিজয় সম্ভব।
যুদ্ধের সময় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ হামলায় ইরানের বহু পারমাণবিক বিজ্ঞানী, সামরিক কমান্ডার ও ক্ষেপণাস্ত্র অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, তেহরান পাল্টা হামলায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আঘাত হানতে সক্ষম হয়। বর্তমানে ইরান মনোযোগ দিচ্ছে স্বল্প ও মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মজুত বৃদ্ধি, হাইপারসনিক প্রযুক্তিতে ‘ফাতাহ’ ও ‘খাইবার শেকান’-এর মতো অস্ত্র সংযোজন এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণে। রাশিয়ার এস-৪০০ ও সু-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনার পাশাপাশি চীনের জে-১০ ও জে-২০ যুদ্ধবিমান সংগ্রহের দিকেও নজর দিচ্ছে তেহরান। আকাশভিত্তিক নজরদারি ব্যবস্থায় দুর্বলতা সনাক্ত হওয়ার পর, ইরান এখন রাশিয়া ও চীনের কাছ থেকে এ ধরনের প্রযুক্তি সংগ্রহকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
সামরিক প্রস্তুতির পাশাপাশি ইরান কূটনৈতিক ও আইনগত লড়াইয়ের ময়দানেও সক্রিয় হতে চাচ্ছে। তারা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনা করছে এবং সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত পারমাণবিক আলোচনায় ফিরবে না বলে জানিয়েছে। এদিকে, যুদ্ধ শুরুর আগেই বিপুল পরিমাণ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রেখেছে ইরান, যা ভবিষ্যতে কৌশলগত চাপ তৈরির মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
এই যুদ্ধবিরতি ইরানের চোখে কোনো শান্তির সনদ নয়। বরং এটি একটি হিসেবি থামা, যাতে সময়কে সঙ্গী করে আবার জেগে ওঠা সম্ভব হয়। তেহরান বিশ্বাস করে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপে ফাটল ধরবে। আর সেই সুযোগে ইরান ধাপে ধাপে শক্তি সঞ্চয় করে একটি বড় প্রত্যাবর্তনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করবে। এই প্রেক্ষাপটে ‘কৌশলগত ধৈর্য’ মানে শুধু অপেক্ষা নয়—এটি একটি জটিল মনস্তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক কৌশলও বটে, যার মাধ্যমে ইরান ভবিষ্যতের বড় সংঘাতের জন্য পেছনের দরজা দিয়ে এগিয়ে চলেছে।