
প্রিন্ট: ২০ জুন ২০২৫, ১০:২০ এএম
৪৬ কোটি বছর আগের মাছের বর্মে সংবেদনশীল দাঁতের শিকড়

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ মে ২০২৫, ০১:০৭ পিএম

স্কেট মাছের সামনের অংশের সিটি স্ক্যানে দেখা যাচ্ছে এর চামড়ায় থাকা দাঁতের মতো শক্ত আঁশ (কমলা রঙে)। ছবি: ইয়ারা হারিদি
মানুষের সংবেদনশীল দাঁতের উৎপত্তি ঘটেছিল প্রাচীন বিলুপ্ত মাছের বর্মাকৃতির আবরণ থেকে—বলা যেতে পারে, আজকের দাঁত একসময় ছিল শরীরের রক্ষাকবচ! প্রায় ৪৬ কোটি ৫০ লাখ বছর আগে একধরনের বিলুপ্ত মাছের শরীরে থাকা সংবেদনশীল খনিজ টিস্যু ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়ে দাঁতে রূপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিয়ন্টোলজিস্ট ও বিবর্তন জীববিজ্ঞানী ইয়ারা হারিডি বলেন, এটি দেখায় যে দাঁত শুধু মুখের অঙ্গ নয়—এটি শরীরের বাইরের অংশেও একসময় সংবেদনশীল ভূমিকা পালন করত।
এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার-এর ২১ মে সংখ্যায়।
গবেষকরা প্রথমে ক্যাম্ব্রিয়ান ও অর্ডোভিসিয়ান যুগের (প্রায় ৫৪ থেকে ৪৪ কোটি বছর আগের) জীবাশ্ম বিশ্লেষণের মাধ্যমে পৃথিবীর প্রথম মেরুদণ্ডী প্রাণী শনাক্ত করার চেষ্টা করছিলেন। এ সময়ে তারা যেসব জীবাশ্ম পরীক্ষা করেন, তার মধ্যে ছিল এক প্রাচীন চোয়ালবিহীন মাছ Anatolepis heintzi।
উচ্চ-রেজল্যুশনের সিটি স্ক্যানে দেখা যায়, মাছটির বর্মে ডেন্টিন নামক খনিজ পদার্থে ভরা ছোট ছোট ছিদ্রের মতো গঠন রয়েছে। মানুষসহ আধুনিক মেরুদণ্ডী প্রাণীদের দাঁতের এনামেলের নিচেও এই ডেন্টিন থাকে। তবে বিশ্লেষণ এগোতে থাকলে এক চমকপ্রদ তথ্য বেরিয়ে আসে—এই গঠনগুলো আধুনিক কাঁকড়ার সংবেদনশীল খোলসের মতো, যা ইঙ্গিত করে A. heintzi আদপে ছিল একটি প্রাচীন অমেরুদণ্ডী আর্থ্রোপড, মেরুদণ্ডী নয়।
এই শ্রেণিবিন্যাসের সংশোধন গবেষণাকে এক নতুন দিকে নিয়ে যায়। দেখা যায়, প্রাচীন মাছ এবং অমেরুদণ্ডী প্রাণী উভয়েই পরিবেশের সংবেদনশীলতা বুঝতে খনিজ টিস্যু তৈরি করত, যা পরবর্তীতে বিবর্তনের ধারায় দাঁতে রূপ নেয়। অর্থাৎ, সংবেদনশীল দাঁতের সূচনা হয় বাহ্যিক বর্ম থেকেই।
গবেষকরা লিখেছেন, “এই বিবর্তনীয় প্রেক্ষাপটে দাঁতের অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা আর রহস্য নয়; বরং এটি এক প্রাচীন উত্তরাধিকার—যা মেরুদণ্ডী প্রাণীদের সংবেদনশীল বর্ম থেকেই এসেছে।”
এই গবেষণা আমাদের দাঁতের ইতিহাসকে শুধু নতুনভাবে বোঝায় না, বরং মানবদেহে সংবেদনশীল অঙ্গগুলোর বিবর্তনের রহস্যও আরও গভীরভাবে উন্মোচন করে।
তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স