২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য তৃতীয় ধাপের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে শুক্রবার থেকে। টিকিটের উচ্চমূল্য নিয়ে সমর্থকদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়লেও মাঠে বসে খেলা দেখার আগ্রহ যে কমেনি, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে ফিফার সর্বশেষ তথ্য। বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, টিকিট বিক্রির প্রথম ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৫০ লাখ টিকিটের জন্য আবেদন জমা পড়েছে।

ফিফার ভাষ্য অনুযায়ী, এই সংখ্যা প্রমাণ করে যে বিশ্বকাপের টিকিটের চাহিদা ‘অসাধারণ পর্যায়ে’ পৌঁছেছে। গত সপ্তাহে ৪৮ দলের টুর্নামেন্টের গ্রুপ চূড়ান্ত হওয়ার পর এবারই প্রথম নির্দিষ্ট ম্যাচ ধরে টিকিটের জন্য আবেদন করতে পারছেন সমর্থকরা।

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিতব্য এই বিশ্বকাপের জন্য ২০০টিরও বেশি দেশের ভক্তরা টিকিট কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। ‘র‌্যান্ডম সিলেকশন ড্র’ পদ্ধতিতে বৃহস্পতিবার থেকে সমর্থকরা ম্যাচ, টিকিট ক্যাটাগরি এবং প্রতি ম্যাচে কতটি টিকিট চান তা বেছে নিয়ে আবেদন করতে পারছেন। তবে সবাই যে টিকিট পাবেন, এমন নিশ্চয়তা নেই। এই পর্যায়ের টিকিট বিক্রি চলবে আগামী বছরের ১৩ জুন পর্যন্ত। যাদের আবেদন গ্রহণ করা হবে, তাদের ফেব্রুয়ারিতে ইমেইলের মাধ্যমে জানানো হবে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূল্য কেটে নেওয়া হবে।

ফিফা জানিয়েছে, তৃতীয় ধাপে সবচেয়ে বেশি টিকিটের চাহিদা এসেছে তিনটি আয়োজক দেশ থেকেই। এরপর রয়েছে কলম্বিয়া, ইংল্যান্ড, ইকুয়েডর, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, স্কটল্যান্ড, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও পানামা।

গ্রুপপর্বের ম্যাচগুলোর মধ্যে পর্তুগাল বনাম কলম্বিয়া ম্যাচের টিকিটের জন্য প্রথম ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছে। আগামী ২৭ জুন মায়ামিতে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোদের প্রথম ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া ব্রাজিল–মরক্কো, মেক্সিকো–সৌদি আরব, ইকুয়েডর–জার্মানি এবং স্কটল্যান্ড–ব্রাজিল ম্যাচগুলোর টিকিটও ব্যাপক চাহিদায় রয়েছে।

বিশ্বকাপ শুরুর আর মাত্র ছয় মাস বাকি থাকলেও টিকিটের দামে বড় ধরনের পরিবর্তন এনে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে ফিফা। ইউরোপের ফুটবল সমর্থকরা অভিযোগ করছেন, প্রথম দফায় যে দামের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, বাস্তবে তা মানা হয়নি।

সংবাদ সংস্থা এপি জানায়, গ্রুপপর্বে সর্বনিম্ন টিকিটের দাম ফিফা নির্ধারণ করেছে ৬০ ডলার (প্রায় ৭ হাজার ৩১৮ টাকা)। অথচ সাত বছর আগে বিশ্বকাপ আয়োজনের বিডিংয়ের সময় যুক্তরাষ্ট্র সকার কর্তৃপক্ষ সর্বনিম্ন ২১ ডলারের টিকিটের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

জার্মান সকার ফেডারেশনের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গ্রুপপর্বে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে টিকিটের দাম ১৮০ ডলার (প্রায় ২২ হাজার টাকা) থেকে শুরু করে ৭০০ ডলার (প্রায় ৮৫ হাজার টাকা) পর্যন্ত। ফাইনাল ম্যাচের টিকিটের সর্বনিম্ন দাম ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১৮৫ ডলার (প্রায় ৫ লাখ ১১ হাজার টাকা) এবং সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৬৮০ ডলার (প্রায় ১০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা)।

এই মূল্যতালিকা প্রকাশের পর সমর্থকদের ক্ষোভ আরও বেড়েছে। ফুটবল সাপোর্টার্স ইউরোপ (এফএসই) ফিফাকে ‘প্রতারক’ ও ‘চাঁদাবাজ’ আখ্যা দিয়েছে। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক রোনান ইভেইন বলেন, বিশ্বকাপের আবহ ও রোমাঞ্চ তৈরিতে মাঠে উপস্থিত সমর্থকদের ভূমিকা দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। কিন্তু ফিফার এই ‘মনুমেন্টাল বিট্রেয়াল’ বিশ্বকাপ সংস্কৃতিকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।

এ নিয়ে এপি ও রয়টার্স ফিফার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও সংস্থাটি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে ফিফার দাবি, বিপুল টিকিট চাহিদাই প্রমাণ করছে যে সমর্থকদের আগ্রহ টিকিটের দামের বিতর্ককে ছাপিয়ে গেছে।