
প্রিন্ট: ১১ জুন ২০২৫, ০৯:২২ এএম

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ মে ২০২৫, ০৮:৫৫ পিএম

ফাইল ছবি
বিতর্কিত ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ (বিশেষ বিধান) আইন’-এর অধীনে বাতিলপ্রযুক্তির মাধ্যমে ওরিয়ন গ্রুপের ৬৩৫ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ চুক্তিকে সম্পূর্ণ অবৈধ বলে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি)-এর সদস্য সচিব হাসান মেহেদী। তিনি অভিযোগ করেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে জনগণের কাঁধে নতুন করে ৩,০৫৯ কোটি টাকার ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে।
মঙ্গলবার (৬ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) বিডব্লিউজিইডি, ক্লিন ও আরও কয়েকটি পরিবেশ ও উন্নয়নকর্মী সংগঠনের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ তোলা হয়। সহ-আয়োজকদের মধ্যে ছিল বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), প্রতিবেশ ও উন্নয়ন ফোরাম (এফইডি), মহেশখালী জনসুরক্ষা মঞ্চ ও সংশপ্তক।
হাসান মেহেদী বলেন, ২০১৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বিতর্কিত বিশেষ আইনের অধীনে ওরিয়ন গ্রুপকে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেয় তৎকালীন সরকার। ২০১৬ সালে পিডিবি ও ওরিয়ন পাওয়ার ইউনিট-২-এর মধ্যে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) স্বাক্ষর হয়, যার আওতায় ২০২০ সালের জানুয়ারির মধ্যে উৎপাদন শুরুর কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প কাজ না হওয়ায় ২০২২ সালে পিডিবি এটি মাতারবাড়িতে সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেয় এবং মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৬ সাল পর্যন্ত করে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুলাইয়ে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০৩০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।
বক্তারা বলেন, এই মেয়াদ বৃদ্ধি না হলে চুক্তিটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যেত। এ প্রেক্ষাপটে ২০২৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর নাগরিক সমাজ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারের উচ্চপর্যায়ে প্রকল্প বাতিলের দাবি জানায়। চলতি বছরের ৪ মে গণস্বাক্ষর সংবলিত আবেদনপত্র অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পরিবেশ, জলবায়ু, জনস্বাস্থ্য এবং অর্থনীতির ঝুঁকি বিবেচনায় ওরিয়ন প্রকল্প বাতিলের দাবিতে দেশের ১৪৪টি নাগরিক সংগঠন চারটি মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কাছে পৃথক আবেদন জমা দিয়েছে।
এছাড়া সমালোচনার তীর ছুঁড়ে বলা হয়, সরকারি তিনটি ব্যাংক এ প্রকল্পে ১০,৫৭৯ কোটি টাকার ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অথচ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের আহসান এইচ মনসুর মত দিয়েছেন, এই অর্থ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ করা উচিত। ২০২৪ সালে একটি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের ঋণ বাতিল হলেও, ওরিয়ন কয়লা প্রকল্পের অর্থায়ন এখনো বহাল রয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বক্তারা বলেন, এটি ২০২৬ সালের মধ্যেও শেষ হবে না। এর ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে।
স্থান পরিবর্তনের ফলে ভূমি ইজারা ও জ্বালানি পরিবহনের খরচ কম হওয়া স্বাভাবিক হলেও, ২০১৬ সালের চুক্তির হারেই এই খরচ বিবেচনা করা হচ্ছে—যা প্রহসন বলে দাবি করা হয়। শুধু এই দুই কারণেই পিপিএ বাতিলের দাবি জোরালো করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের শেষদিকে প্রকল্পের ইআইএ অনুমোদন পেলেও, ২০২৪ সালের ৩০ অক্টোবর বিডব্লিউজিইডি তা বাতিলের আবেদন করে পরিবেশ উপদেষ্টার কাছে। আর ২০২৫ সালের ১ মার্চ মাতারবাড়ির স্থানীয়রা মানববন্ধন করে প্রকল্পের বিরোধিতা জানান।
সুশীল সমাজের মত, এখনো সরকারের হাতে যথেষ্ট সময় ও সুযোগ রয়েছে প্রকল্পটি বাতিল করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির পথে অগ্রসর হওয়ার।