যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের নিয়েই নির্বাচনি জোট গঠনের উদ্যোগ বিএনপির
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:২৯ পিএম
দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে পাশে থাকা শরিকদের আসন ছাড় দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মিত্রদের কাছে ইতোমধ্যে আসনের তালিকা চাওয়া হয়েছে। তবে বিএনপি স্পষ্ট করেছে—শুধু যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোকেই তারা মূল্যায়ন করবে, অন্য কোনো জোটে গেলে আসন ছাড় দেওয়া হবে না।
গত মঙ্গলবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। ভার্চুয়ালি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিএনপি দ্রুতই শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন বণ্টন ও জোট গঠনের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসবে।
দলীয় সূত্র বলছে, শরিকদের আসন দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থী নির্বাচনের যোগ্যতা, জনপ্রিয়তা এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের শক্তি-বলয় বিবেচনা করা হবে। যেসব শরিককে মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব হবে না, তাদের অন্যভাবে মূল্যায়ন করার আশ্বাসও দেবে বিএনপি। বয়সজনিত কারণে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইছেন না, তাদের টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী বা সংসদের উচ্চকক্ষে স্থান দেওয়ার বিষয়েও চিন্তা করছে হাইকমান্ড।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জোট থেকে সরে আসার কোনো প্রশ্ন নেই। রাজপথে যারা কষ্ট করেছেন, কারাগারে গেছেন—তাদের অবশ্যই মূল্যায়ন করা হবে।
বৈঠকে আরও আলোচনা হয় জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান নিয়ে। সূত্র জানায়, জামায়াত ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেও তাদের জনভিত্তি দুর্বল। অন্যদিকে বিএনপির প্রতিটি আসনেই একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকায় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে সময় লাগবে। এজন্য বিভেদ এড়াতে দলটি তফসিলের আগেই একক প্রার্থী ঘোষণা দিতে চায়।
ইতোমধ্যে দেড় শতাধিক প্রার্থীকে মাঠে নামিয়েছে বিএনপি। হেভিওয়েট আসনগুলো আগের মতোই নির্দিষ্ট রাখা হয়েছে, বাকি আসনগুলো নিয়ে শরিকদের সঙ্গে সমন্বয় হবে। তবে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবে পার্লামেন্টারি বোর্ড, যা দলের স্থায়ী কমিটি দ্বারা পরিচালিত হবে।
বৈঠকে আসন্ন দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা হয়। পূজামণ্ডপে শান্তি বজায় রাখা এবং যেকোনো নাশকতা প্রতিরোধে নেতা-কর্মীদের পাহারা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে যেমন আসন ছাড় দিয়েছিল বিএনপি, এবারও শরিকদের কাছে ৩০টির মতো আসন ছাড়তে পারে। তবে শরিকরা চাইছে অর্ধশতাধিক আসন। আলোচনায় থাকা আসনগুলোর মধ্যে বগুড়া-৪-এ মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা-৮-এ সাইফুল হক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬-এ জোনায়েদ সাকি, পটুয়াখালী-৩-এ নুরুল হক নুরসহ বহু নেতার নাম রয়েছে।
এ বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা সাইফুল হক বলেন, বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসব। তাদের নির্বাচনি দৃষ্টিভঙ্গি শুনব, আমরাও আমাদের মতামত তুলে ধরব। সমঝোতা হলে কোনো সমস্যা থাকবে না।
দীর্ঘ আন্দোলনের পথ অতিক্রম করে এবার নির্বাচনি লড়াইয়ে শরিকদের জন্য আসন ছাড়ে নীতিগত অবস্থান নেওয়া বিএনপির কৌশল—রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।



