ডাকসু ও রাকসু নির্বাচনে সংঘাতের আশঙ্কা গোয়েন্দাসংস্থার
স্টাফ রিপোর্টার :
প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৫, ১১:১৫ পিএম
ছবি-সংগৃহীত
আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ(ডাকসু) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ব্যাপক সংর্ঘষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। দিন যতোই ঘনিয়ে আসছে পরিবেশ পরিস্থিতি ততোই উত্তপ্ত হয়েছে উঠছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার শঙ্কা আগে থেকে পরিবেশ-পরিস্থিতি সামাল না দেওয়া গেলে নির্বাচনে ব্যাপক সংঘাত অনিবার্য।
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও ১৫ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এরই মধ্যে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সব ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে দুই বিশ্ববিদ্যালয়েই সরব রয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরইমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের হল কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
একটি সূত্র জানিয়েছে,ওই সংঘর্ষে প্রাণ হানির ঘটনাও ঘটতে পারে। এ কারণে নির্বাচনের আগে সব প্যানেলের কাছ থেকে সংঘাত পরিহার এবং প্রয়োজনে নির্বাচন বাতিলের বিষয়ে লিখিত অঙ্গিকার নেওয়া প্রয়োজন বলে মতামত দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে কুৎসা রটানোসহ সংঘাতের উসকানি দেওয়ার অভিযোগ প্রমানিত হলে প্রার্থীতা বাতিলের সুপারিশও করা হয়েছে। এছাড়া ব্যালট বাক্স ছিনতাই রোধে ৩ স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলাসহ আরো স্পর্সকাতর কিছু বিষয় উল্লেখ করে সম্প্রতি সরকারের উর্ধতনের কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে গোয়েন্দা সংস্থার এমন প্রতিবেদনের পর রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে প্রশাসনিক ভবনে জরুরী বৈঠকে বসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. নিয়াজ আহমেদ খান । একই সাথে পুলিশ সদরদপ্তরেও এ বিষয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে পুলিশের বৈঠকে কি সীদ্ধান্ত হয়েছে তা প্রকাশ করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের আইজপি বাহারুল আলম বলেন, সব ধরণের নির্বাচনেই সংঘাতের শঙ্কা থাকে। তেমনই এই নির্বাচনেরও শঙ্কা থেকে যায়। এ কারণে পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি ছাত্র সংসদ নির্বাচনের নির্বাচন কমিশন থেকে চাহিদা অনুযায়ি পুলিশ পদক্ষেপ নিবে।
এমন পরিস্থিতিতে হলের রাজনীতির বাইরে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে বলে মতামত দিয়েছে ছাত্র শিবির। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে বিভক্তি দৃশ্যমান। এ কারণে ঢাকসু ও রাকসু নির্বাচনে সরাসরি ছাত্র সংগঠনের ব্যনারে না হলেও মতাদর্শের ভিত্তিতে প্যানেল দিতে পারে ছাত্র সংগঠনগুলো। ফলে সবার অবস্থান প্যানেল ঘোষণার পর দৃশ্যমান হবে। এ কারণে সব পক্ষই শক্তির মহড়া দেখাতে মরিয়া হবে। পাশাপাশি হল কেন্দ্রিকও শক্তি প্রদর্শনে মরিয়া হয়ে উঠবে সংগঠনগুলো। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে বিরোধ বাড়বে এবং সংঘাতের সূত্রপাত ঘটতে পারে। এতে আহতের পাশাপাশি প্রাণহানিও ঘটতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কর্মী ও সমর্থকের সংখ্যা বেশি। এছাড়া রাজধানীতে অবস্থিত বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়েও তাদের ব্যাপক কর্মী ও সমার্থক রয়েছে। নির্বাচনের দিনক্ষণ এগিয়ে আসায় ঢাবির ছাত্রদলের সঙ্গে শো-ডাউনে যুক্ত হতে পারে ওইসব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সমার্থকরাও। এতে উত্তেজনা আরো বাড়তে পারে। ছাত্রদলের সঙ্গে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মী ও সমার্থকরাও যুক্ত হতে পারে।
একই সাথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের কর্মী ও সমার্থকের সংখ্যা বেশি। সেখানে এলাকা ভিত্তিকও তাদের সমার্থক রয়েছে। রাজশাহী সরকারী কলেজেও শিবিরের শক্ত অবস্থান রয়েছে। নির্বাচনের আগে ওই কলেজের কর্মী-সমার্থকরাও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের সাথে মিলে মহড়ায় অংশ নিতে পারে। প্রতিবেদন অনুযায়ি এতে বিপদে পড়তে পারে সরকার।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও নতুন প্রশ্ন উঠতে পারে। এই সুযোগে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগ সুযোগ নিয়ে দেশে অস্থিতিশিল পরিস্থিতি তৈরী করতে পারে। যার প্রভাব পড়তে পারে জাতীয় নির্বাচনেও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমেও বিষয়গুলো ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে আরো সজাগ থাকার পাশাপাশি পুলিশের সাইবার ইউনিটকে এক্ষেত্রে আরো কার্যকর ভূমিকা রাখার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের বেশির ভাগ জাতীয় নির্বাচনের আগে ছাত্র সংসদের নির্বাচনের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গণঅভ্যুত্থানে সৃষ্ট সব ছাত্রসংগঠনের ঐক্যও বিনষ্ট হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে করে ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্ন হওয়াসহ জাতীয় রাজনীতিতেও এর দীর্ঘমেয়াদি খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা বলেও ডাকসু নির্বাচন ইস্যুতে তাদের মধ্যে ভিন্নমত দেখা গেছে। নির্বাচন নিয়ে স্পষ্ট মতপার্থক্য দেখা গেছে বিভিন্ন বড় ছাত্রসংগঠনের মধ্যে। প্রক্রিয়া, সম্ভাব্য সংস্কার ও নির্বাচনের সময় নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছে ছাত্রসংগঠনগুলো। এ নিয়ে বিরোধ, পালটা বক্তব্য, প্রতিবাদ মিছিলে সরগরম হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। কোনো পক্ষ দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বললেও অন্য পক্ষ যাবতীয় সংস্কার ও উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতের পরই নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রক্রিয়ার পক্ষে।
এমন পরিস্থিতিতে ডাকসু নির্বাচন ইস্যুতে ছাত্রদের বড় অংশের এমন পরস্পরবিরোধী অবস্থান ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্ন করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, “নিয়মতান্ত্রিকভাবে যদি ডাকসু হতো, তাহলে এখন এত উত্তাপ বা উত্তেজনা তৈরি হতো না। আগে আমরা দেখেছি যারা ডাকসুতে নেতৃত্বে আসে, তারা ‘ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণে’ চায়। এই সুযোগটা কেউই মিস করতে চায় না।”



