
প্রিন্ট: ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১২:৪১ পিএম
লিবিয়ায় জিম্মি দুই প্রবাসীকে ৪২ দিন পর উদ্ধার করল পিবিআই

অনলাইন ডেস্ক :
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৫:০৪ পিএম

গত ৮ জানুয়ারি আলমগীর হোসেন (৪৫) ও সিরাজ উদ্দিন (৩৫) লিবিয়ার ত্রিপোলিতে জমাজৈতন এলাকায় ওয়ার্কশপে কাজ করা অবস্থায় অপহৃত হন। পরে রাত ১টার দিকে ভিকটিমদের ব্যবহৃত নম্বরের আইএমও অ্যাপসের মাধ্যমে তাদের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ বাবদ জনপ্রতি বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২২ লাখ টাকা দাবি করে অপহরণকারীরা।
মুক্তিপণ আদায় করার লক্ষ্যে ভিকটিমকে আইএমওতে লাইভে রেখে নির্মমভাবে শারীরিক নির্যাতন করে দ্রুত মুক্তিপণ না দিলে তাদের প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। ১৩ জানুয়ারি ভিকটিম সিরাজ উদ্দিনের ভাবি পারভীন আক্তার অপহরণকারীদের দেওয়া বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা প্রদান করেন। তারপরও ভিকটিমকে মুক্তি না দিয়ে নানা প্রকারের অত্যাচার করতে থাকলে ভিকটিম আলমগীরের বড় ভাই বাদী আব্দুল মালেক (৫২) অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে আদাবর থানার মামলা করেন। বাদীর উদ্ধার আবেদনের প্রেক্ষিতে ও মামলাটির গুরুত্ব বিবেচনায় পিবিআই, ঢাকা মেট্রো (উত্তর) স্ব-উদ্যোগে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত শুরু করে।
পিবিআই অজ্ঞাতনামা অপহরণকারীদের গোয়েন্দা তথ্য পর্যালোচনাপূর্বক আসামি মোঃ রাসেল হক (২৫), পিতা-মৃত মোঃ মতিউর রহমান, সাং- লক্ষীনারায়ণপুর, থানা ও জেলা : চাপাইনবাবগঞ্জকে গত ৩০ জানুয়ারি রাজশাহী মহানগরের বোয়ালিয়া থানাধীন কড়ইতলা মোড় হতে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আসামি মোঃ রাসেল হক তার লিবিয়া প্রবাসী মামা কামাল হোসেনের সঙ্গে ভিকটিমের পরিবারের দেওয়া মুক্তিপণের টাকা লেনদেনের বিষয়ে আইএমও-তে বিভিন্ন সময়ে কথা বলেছেন। ভিকটিম সিরাজের পরিবারের পাঠানো দেড় লাখ টাকার ব্যাংক স্লিপটি কামাল হোসেন গ্রেফতারকৃত আসামির ইমোতে প্রেরণ করেন। উক্ত প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে তার নিকট থেকে একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
আসামিকে গ্রেফতারের পর অপহরণকারীরা ভিকটিমদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় এবং তাদের মেরে ফেলেছে মর্মে জানিয়ে নম্বর ব্লক করে দেয়। তখন ভিকটিমদের ওপর আরো অমানবিক অত্যাচার শুরু করে। তারা বেশির ভাগ সময় তাদের নম্বর ব্যবহার করে কথা বলত। মাঝে মাঝে 'টাকা নাই জীবন নাই' নামের আইএমও নাম লেখা নম্বর হতে কল করে ভিকটিমদের পরিবারকে টাকা না দিলে হত্যা করবে বলে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিত।
অজ্ঞাতনামা অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা ভিকটিমদের হাত-পা বেঁধে সারা শরীরে মারধর করত। কখনো কখনো পায়ের তালুতে পিভিসি ও ইলেকট্রিক মোটা ক্যাবলের তার দিয়ে মারত। এছাড়া হাঁটুতে মেরে গুরুতর জখম করে যাতে উঠে দাঁড়াতে না পারে। খাবারের ও পানীয় জলের কষ্ট দিত। এমনকি শীতের মধ্যে উলঙ্গ করে মুখে গামছা ভরে শরীর দেওয়ালের সাথে ঠেকিয়ে বেধড়ক মারধর করত।
সপ্তাহখানেক পর পুনরায় তাদের জীবন ভিক্ষা চাইলে জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা চেয়ে ভিকটিমদের পরিবারকে হুমকি দিতে থাকে। তখন উপায় না পেয়ে ভিকটিমদের পরিবার গত ১৬ ফেব্রুয়ারি অজ্ঞাতনামা অপহরণকারীদের দেওয়া অ্যাকাউন্ট ফরাজী টেলিকম, ইসলামী ব্যাংক পিএলসি অ্যাকাউন্ট নম্বরে দুই লাখ করে মোট চার লাখ টাকা পাঠান। উক্ত অ্যাকাউন্টের সূত্র ধরে ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অ্যাকাউন্টের মালিক মোঃ মিন্টু ফরাজী (৩৯), পিতা-মোঃ হাবিবুর রহমান ফরাজী, মাতা-মৃত ফাতেমা বেগম, স্থায়ী সাং-বাদুরতলা, বিশারীঘাটা, মোরলগঞ্জ বাগেরহাট হতে গ্রেফতার করা হয়। ধৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় তার দুসম্পর্কের ভাগনী জামাই লিবিয়া প্রবাসী নজরুল ইসলাম তার অ্যাকাউন্টে টাকা প্রেরণ করেছে। তার মোবাইলে ভিকটিমের পরিবারের দেওয়া মুক্তিপণের টাকা লেনদেনের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে কথা বলেছেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। ভিকটিদের পরিবারের পাঠানো ৪ লাখ টাকার ব্যাংক স্লিপটি নজরুল ইসলাম গ্রেফতারকৃত আসামির ইমোতে প্রেরণ করেন। উক্ত প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে তার নিকট থেকে একটি মোবাইল ফোন সেট জব্দ করা হয়। বিএফআইইউ-এর সহায়তায় ওই অ্যাকাউন্টটি ফ্রিজ করা হয়।
পরবর্তীতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি লিবিয়ার ত্রিপোলী এলাকার জিলজিয়া হাসপাতাল এলাকায় ভিকটিমদের ফেলে রেখে যায়। ভিকটিমরা ব্রাক মাইগ্রেশনের মাধ্যমে আইওএম (ইন্টারন্যাশনাল অরগানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন)-এর হেফাজতে ছিল। গত ৯ জুলাই ভিকটিম আলমগীরকে পিবিআই হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর থেকে হেফাজতে নেয়। অপর ভিকটিম সিরাজ উদ্দিনের আগমন বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলমান রয়েছে। -বিজ্ঞপ্তি।