
প্রিন্ট: ০৭ জুলাই ২০২৫, ০২:২২ পিএম
আ.লীগকে পুনর্বাসনের পথ তৈরি করছে অন্তর্বর্তী সরকার : তারেক রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৫, ০৯:৩৬ পিএম

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অভিযোগ করেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে ব্যর্থ হচ্ছে এবং বিভিন্ন ইস্যু তৈরি করে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। একইসঙ্গে তিনি মনে করেন, এই সরকার এক ধরনের কৌশলের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের পথ তৈরি করছে।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটের খামারবাড়ী বার্ক মিলনায়তনে ‘ইস্টার পুনর্মিলনী ও শুভেচ্ছা বিনিময়’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ খ্রিস্টান ফোরাম।
তারেক রহমান বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ডে জনমনে প্রশ্ন জেগেছে তারা আদৌ সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে কিনা। নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ চলছে, যেটিকে ‘সংস্কার’ নামে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “বিএনপি শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সহযোগিতা ও সমর্থন দিয়ে এসেছে, কারণ আমরা জনগণের ভোটে একটি জবাবদিহিমূলক সরকার দেখতে চাই। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে এই সরকার একদিকে পলাতক স্বৈরাচার ও তাদের সহযোগীদের নিরাপদে দেশত্যাগের সুযোগ করে দিচ্ছে, অন্যদিকে বিরোধী রাজনৈতিক ঐক্যে ফাটল ধরানোর কৌশল নিচ্ছে।”
এ সময় ২০১৩ সালে গুম হওয়া বিএনপি নেতা সাজিদুল ইসলাম সুমনের প্রসঙ্গ তুলে তিনি জানান, বৃহস্পতিবার তার পরিবারের বাড়িতে পুলিশি অভিযান চালানো হয়, অথচ প্রশাসন পরে বলেছে তারা সুমনের সম্পর্কে অবগত নয়।
তিনি বলেন, “একজন গুম হওয়া নেতার পরিবারকে হয়রানি করছে প্রশাসন, অথচ একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি যদি দেশ ছাড়েন, তা নিয়েও সরকারের কোনো তথ্য নেই—এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?”
তারেক রহমান বলেন, “সব দিক বিবেচনায় এখন মানুষের মনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে—এই সরকার আসলে জানে কী? নাকি সব জেনেও তারা সময়ক্ষেপণের মাধ্যমে স্বৈরাচার ও তাদের দোসরদের জন্য নতুন মঞ্চ প্রস্তুত করছে?”
তারেক রহমান বলেন, একটি রাষ্ট্রে সংখ্যাগুরু কিংবা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠির সদস্য হওয়া না হওয়ার ওপর দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা কিন্তু নির্ভর করে না। আমরা যদি পেছনের দিকে দেখি দেখব পলাতক স্বৈরাচারের সময়ও কিন্তু বর্বর যে বন্দিশালা আয়নাঘর অন্ধকার প্রকোষ্ঠ বছরের পর বছর সেখানে বিনা বিচারে বন্দি মানুষরাই কিন্তু সবচেয়ে বড় উদাহরণ। দেশের গণতন্ত্র ও আইনের শাসন না থাকলে আপনি কিংবা আমি আমরা কেউই কিন্তু নিরাপদ নই। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বও নিরাপদ নয়। রাষ্ট্রে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনই নিশ্চয়তা দিতে পারে নাগরিকদের নিরাপত্তা। দেশের আইনের শাসন ও গণতন্ত্র নিশ্চিত করার অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সংসদ ও সরকার প্রতিষ্ঠা। নির্বাচিত সরকারকে জনগণের প্রতি মুখাপেক্ষী করা গেলে দেশের গণতন্ত্র ও আইনের শাসন টেকসই হয়ে উঠে। গণতান্ত্রিক দেশগুলো যার বড় উদাহরণ। সরকারকে জনগণের কাছে মুখাপেক্ষী এবং দায়বদ্ধ না করে উল্টো নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য এক ধর্মের মানুষকে যদি অন্য ধর্মের মানুষের মুখাপেক্ষী করে দেওয়া হয়, এতে বরং রাষ্ট্র ও সরকারের অসহায়ত্ব এবং গণতান্ত্রিক চেহারাই কিন্তু ফুটে উঠে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমরা দেখেছি আওয়ামী স্বৈরাচার সরকার নিজেদের অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে বিভিন্ন সময়ে দেশের সংবিধানকে প্রায় নিজেদের দলীয় সংবিধানে পরিণত করেছিল। এমন বাস্তবতায় বিএনপি মনে করে, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সংবিধানে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচারের মূল যে মন্ত্র সেটিতে অক্ষুণ্ন রেখে সংবিধানের সময়পোযোগী সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই। ফলে সংবিধান সংস্কারের ব্যাপারে সরকারের কাছেও বিএনপি তার সুস্পষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে।
বাংলাদেশ খ্রিস্টান ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট জন গমেজের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার, আব্দুস সালাম, বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশ’র আর্চবিশপ বিজয় এনডি ক্রুজ, বাংলাদেশ খ্রিস্টান ফোরামের মহাসচিব অনিল লিও কস্তা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।