
প্রিন্ট: ১৯ জুন ২০২৫, ০১:৩১ এএম
রাখাইন করিডোর ইস্যুতে বিএনপির উদ্বেগ , জাতীয় ঐক্য গড়ার ঘোষণা

যুগেরচিন্তা২৪ ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২৭ এএম

ফাইল ছবি
চট্টগ্রাম পার্বত্য এলাকা থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে একটি মানবিক করিডোর অনুমোদনের সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটি একে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করে জানিয়েছে, এই উদ্যোগ প্রতিরোধে সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে যৌথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ইউএনবিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিন সদস্য বলেন, এই ঝুঁকিপূর্ণ পরিকল্পনা বাতিলের জন্য সরকারকে চাপ দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের মতো একটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হতে পারে।
তারা জানান, বিএনপি হয় সরকারকে চিঠি দেবে অথবা একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে করিডোর বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটি সোমবার রাতে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আলোচনা করে এবং গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এ বিষয়ে মতাদর্শগত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হবে এবং পাশাপাশি সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য ও রাখাইনের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
পরে প্রাপ্ত তথ্য ও যুক্তির ভিত্তিতে পুরো বিষয়টি জাতির সামনে উপস্থাপন করবে বিএনপি। তারা বলছে, জনগণের ম্যান্ডেটহীন একটি অনির্বাচিত সরকার দেশের জন্য এমন সংবেদনশীল সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রাখে না।
শনিবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ঘোষণা দেন, সরকার নীতিগতভাবে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্দিষ্ট কিছু শর্তে একটি মানবিক করিডোর খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোমবার এক অনুষ্ঠানে এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে বলেন, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক শান্তি-স্থিতিশীলতার সঙ্গে সম্পর্কিত এমন একটি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার কোনো উদ্যোগ না নিয়ে সরকার একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি বলেন, "আমরা আমাদের দেশকে গাজা বানাতে চাই না। আমরা আর যুদ্ধ চাই না। আমরা চাই না কেউ আমাদের দেশে এসে সমস্যা তৈরি করুক। আমরা রোহিঙ্গা সংকটেই চরম সঙ্কটে রয়েছি।"
সেই রাতেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে একই ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
এক বিএনপি নীতিনির্ধারক বলেন, এই ইস্যুকে আমরা এতটা গুরুত্ব দিয়েছি যে, পুরো বৈঠকটাই এই একটি বিষয় নিয়ে হয়েছে। প্রায় সব সদস্যই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সরকারের একতরফা পদক্ষেপের ওপর।
তিনি বলেন, একটি যুদ্ধে জর্জরিত দেশের সঙ্গে, যেখানে জান্তা সরকার এবং আরাকান আর্মি সশস্ত্র সংঘর্ষে লিপ্ত এবং সরকার আরাকান আর্মিকে দমন করতে সব ধরনের সরবরাহ বন্ধ করেছে, সেখানে বাংলাদেশের এই করিডোর দেওয়ার যৌক্তিকতা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে আমাদের গভীর উদ্বেগ রয়েছে।
অন্য এক নীতিনির্ধারক বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে মানবিক কারণে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বোঝা বহন করছে, আরেকটি সংকটে জড়ানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি করা ঠিক হবে না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতি আছে, রাখাইনের পরিস্থিতি অত্যন্ত মানবিক সঙ্কটময়। কিন্তু বাংলাদেশকেও চিন্তা করতে হবে এই ইস্যুতে প্রতিবেশী দেশ, বিশেষ করে চীন ও ভারতের অবস্থান কী।
বৈঠকে এক সদস্য আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এই করিডোরের পরিকল্পনা হয়তো আন্তর্জাতিক কোনও চক্রান্তের অংশ হতে পারে, যার উদ্দেশ্য চট্টগ্রাম পার্বত্য এলাকা ও রাখাইন রাজ্য নিয়ে একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠন করা। আর তা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের মত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা এখনো পুরো বিষয়টা জানি না। গণমাধ্যম থেকে আমরা জেনেছি, সরকার কোনও আলোচনা ছাড়াই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার নাকি নির্দিষ্ট কিছু শর্তে এই করিডোর দিতে চায়। কিন্তু আমরা জানি না সেই শর্তগুলো কী।
তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, পুরো জাতিকে স্পষ্ট করে জানানো হোক এই সিদ্ধান্তের পেছনের যুক্তি ও শর্তাবলি কী।
তিনি জানান, আমরাও তথ্য সংগ্রহ করছি, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলব এবং এরপরেই আমাদের দলীয় অবস্থান ঘোষণা করব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা, শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সার্বভৌমত্ব চরম হুমকির মুখে পড়বে।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, মিয়ানমারে যদি কোনও পক্ষের সঙ্গে সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে, তবে তা বাংলাদেশের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ হবে।
সালাহউদ্দিন আরও বলেন, আমরা সরকারকে জিজ্ঞেস করব, এই করিডোর বিষয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কোনও পক্ষের সঙ্গে আদৌ কোনও আলোচনা হয়েছে কিনা। যদি হয়ে থাকে, সেই আলোচনার শর্ত কী ছিল? কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো? সরকারের ব্যাখ্যা পাওয়ার পরই আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করব।