
প্রিন্ট: ০৭ জুলাই ২০২৫, ০৩:৫০ পিএম
ওয়ারেন্টি দিচ্ছি, দেশের মানুষ নিরাপত্তা ও সম্মান নিয়ে বাঁচবে : জামায়াত আমির

লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:০৩ পিএম

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। ফাইল ছবি
লালমনিরহাটে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আয়োজিত জনসভায় দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সীমান্ত লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করে লালমনিরহাটের যুবক হাসিনুরকে নির্যাতনের পর গুলি করে হত্যা করেছে।
তিনি বলেন, হাসিনুর কি মানুষ না? একজন মানুষের বুকের ওপর পা দিয়ে গুলি করে কিভাবে হত্যা করা যায়?
প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের প্রতি সম্মান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা চাই শ্রদ্ধা, সম্মান ও সম্প্রীতির সঙ্গে প্রতিবেশী হিসেবে থাকতে। আমরা ভালো না থাকলে তারাও ভালো থাকবে কিনা, সেটা ভারতের ভাবা উচিত।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে লালমনিরহাট কালেক্টরেট মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ডা. শফিক।
তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ডিসেম্বরেই নির্বাচন হবে। আমরাও নির্বাচন চাই। তবে তার আগে খুনিদের বিচার ও প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সংস্কার প্রয়োজন। সংস্কার ছাড়া পেশিশক্তির নির্বাচনে জনগণ অংশ নেবে না।
জামায়াত আমির বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদায়ের পর আমরা ১৫ দিন মসজিদ, মন্দির, গির্জা পাহারা দিয়েছি। আমরা এমন রাষ্ট্র চাই, যেখানে কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়কে পাহারা দিতে না হয়, বরং সবাই নিরাপত্তা ও সম্মান নিয়ে বসবাস করবে।
তিনি কোরআনভিত্তিক সৎ শাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, আমরা এমন বাংলাদেশ চাই, যেখানে প্রত্যেকে নিরাপদ থাকবে। আমরা আল্লাহকে ভয় করি। যারা আল্লাহকে ভয় করে, তারা কারও ইজ্জত নষ্ট করে না।
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্টরা জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল, গুম-খুনের রাজত্ব কায়েম করেছিল। এখনো সমাজে চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব চলছে। তিনি জনগণকে এসব অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, দুর্নীতির মূল কারণ হলো সরকারি কর্মচারীদের পর্যাপ্ত বেতন না দেওয়া। ১৩ হাজার টাকার বেতনে ১৫ হাজার টাকার বাসাভাড়া দিলে কর্মচারী কীভাবে সৎ থাকবে?
শিক্ষা নিয়ে ডা. শফিক বলেন, বর্তমান শিক্ষার্থীরা সনদ হাতে নিয়ে কর্মসংস্থানের জন্য ধর্না দেয়—এটা আমরা চাই না। আমরা এমন ব্যবস্থা গড়ে তুলব, যেখানে সনদ নিয়েই চাকরিতে প্রবেশ করা যাবে।
নারীর নিরাপত্তা বিষয়ে তিনি বলেন, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীরা চাকরি করতে পারবে না—এটা ভুল ধারণা। আমরা প্রথমে নারীদের নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করবো। এমন বাংলাদেশ চাই, যেখানে নারীরা স্বাধীনভাবে চলতে পারবে, কেউ চোখ তুলে তাকানোর সাহস পাবে না।
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট আবু তাহের। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, জেলা সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট ফিরোজ হায়দার লাভলু, হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের সভাপতি পুস্পজিৎ রায়সহ কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক নেতৃবৃন্দ।
সভা শেষে ডা. শফিকুর রহমান বিএসএফের গুলিতে নিহত হাসিনুরের বাড়িতে যান এবং তার পরিবারের খোঁজখবর নেন। এরপর তিনি নীলফামারীর উদ্দেশে যাত্রা করেন। উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর এই প্রথমবার লালমনিরহাটে জামায়াতে ইসলামী এ ধরনের জনসভা আয়োজন করল।