জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে বহিষ্কৃত নেতারা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠনের পথে। ‘জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক জোট’ নামের এই নতুন মোর্চা আগামীকাল সোমবার রাজধানীর গুলশানের এক রেস্তোরাঁয় আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করবে। এতে যোগ দিতে চলেছে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জাতীয় পার্টি (জেপি) এবং মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির একাংশ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জাপার বিভিন্ন অংশের এই পদক্ষেপের পেছনে লাঙ্গল প্রতীক পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বড় ভূমিকা রাখছে। নির্বাচন কমিশন প্রতীক নিষিদ্ধ না করায় জাপার সব অংশই প্রতীকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তৎপর।
নতুন জোটের নেতৃত্বে থাকছেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সাবেক কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং জনতা পার্টি বাংলাদেশের মহাসচিব শওকত মাহমুদ। তারা জানিয়েছেন, নতুন জোটের মূলমন্ত্র হবে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, উদার গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় সহাবস্থান। শুধু নির্বাচনি জোট নয়, দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি পাল্টানোর লক্ষ্যও তাদের।
ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলকে জোটে যুক্ত করার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, জাতীয় ইসলামিক মহাজোট, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামিক জোট, পিস অ্যালায়েন্সের সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে।
এদিকে ইলিয়াস কাঞ্চনের জনতা পার্টি বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশের পরই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে মদদের অভিযোগ ওঠায়।
অন্যদিকে নিবন্ধিত ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা একাংশ) এবং ন্যাপ (ভাসানী)সহ বেশ কিছু নামসর্বস্ব দলও এই জোটে যুক্ত হওয়ার পথে।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জানিয়েছেন, দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তির বিভক্তির সুযোগে তৃতীয় শক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থান তৈরি করাই তাদের লক্ষ্য। তাঁর ভাষায়, বিএনপি ও জামায়াত একদিকে, আর আওয়ামী লীগ অনিশ্চয়তার মুখে। এই পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধ হলে ভালো ফল করার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে জোটভুক্তি নিয়ে সংশয় রয়েছে জেপির ভেতরেও। দলের অনেক নেতা আশঙ্কা করছেন, নতুন জোটে গেলে জেপির নিজস্ব প্রভাব কমে যেতে পারে। সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন জেপির মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম।
জাপার (মতিন) মহাসচিব জাফর আহমেদ জয়ও জানিয়েছেন, আলোচনায় অংশ নিলেও জোটে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।
এমন সময়ে জোট ঘোষণা এলো, যখন জাপা ও জেপিকে নিষিদ্ধ করার দাবিও উঠেছে। জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র জনতার বিরুদ্ধে নিপীড়নে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে জাপার দলছুট কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। আবার অন্য অংশের অভিযোগ, এই দলছুট নেতাদের অতি ক্ষমতাসীন ঘনিষ্ঠতা জাপাকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করেছে।
বিতর্কের ভিড়েও আশাহত নন বহিষ্কৃত নেতারা। জোটের শীর্ষ নেতা রুহুল আমিন হাওলাদার দাবি করেছেন, তারা জাপার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাউন্সিল করেছেন এবং লাঙ্গল প্রতীক তাদেরই। তিনি বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হলে লাঙ্গল প্রতীকেই তারা নির্বাচন করবেন।
নতুন জোট রাজনীতির মাঠে কোনো শক্তি হয়ে উঠতে পারবে কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রশ্ন থাকলেও এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণাকে সামনে রেখে চলছে তৎপরতা।



