নির্বাচনি অনিশ্চয়তায় ‘অপেক্ষা করো’ নীতিতে এনসিপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১১:২০ এএম
জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া–নেওয়া না–নেওয়া প্রশ্নে দোলাচলে রয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলের একাংশ মনে করছে, এখনো নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়নি; অন্য অংশ চাইছে ‘নতুন রাজনীতির’ বার্তা বহনকারী কয়েকটি উদীয়মান রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে জোটে যেতে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, সময় ও পরিস্থিতি বুঝে বড় দুই দলের যেকোনো একটির সঙ্গে সমঝোতা করাও যেতে পারে। সব মিলিয়ে এনসিপি এখনো সুস্পষ্ট সিদ্ধান্তে না গিয়ে আপাতত ‘অপেক্ষা করো’ কৌশলেই আছে।
‘নতুন রাজনীতি’ প্রবর্তনের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হতে না চাইলেও এনসিপির নেতারা স্বীকার করছেন—ভোটের মাঠ এখনো ততটা নিরাপদ নয়। তৃণমূলে নেতা-কর্মীদের প্রচারে বাধা ও হুমকির অভিযোগও উঠেছে। তাই অনুকূল পরিবেশ না এলে সমমনাদের নিয়ে আলাদা জোটের কথাও ভাবছে দলটি। তবে সেই ‘সমমনাদের’ তালিকা নিয়ে দলটির ভেতরেই রয়েছে মতভিন্নতা। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই জোট–অবস্থান স্পষ্ট করবে বলে জানিয়েছে এনসিপি।
দলীয় সভায় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানান, ৩০০ আসনেই প্রার্থী দিতে চায় দলটি। তবে নীতি–আদর্শ ও ইশতেহারের সঙ্গে মিল থাকলে যেকোনো দলের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সমঝোতা হলেও সেটা হবে নীতিগত অবস্থানের ভিত্তিতে।
নেতারা অভিযোগ করছেন—নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ অনুপস্থিত। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। বিএনপি–জামায়াতের পেশিশক্তি প্রদর্শনের অভিযোগ তুলে বলছেন, বিশেষ করে ঢাকার বাইরে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ।
এই পরিস্থিতিতে দলটি বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে ‘ইতিবাচক আলোচনা’ চালালেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে তফসিল–পরবর্তী বাস্তবতার ওপর।
এদিকে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু জানিয়েছেন, ২৫ নভেম্বরের মধ্যে এনসিপিসহ কয়েকটি দলকে নিয়ে নতুন জোট ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে। জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে যারা সক্রিয় ছিলেন, তাঁদের নিয়েই জোট গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
দলীয় সূত্র বলছে, কিছু আসনে এনসিপির জয়ের সম্ভাবনা আছে। সেই সম্ভাবনা ক্ষুণ্ন হলে বড় দলের সঙ্গে সমঝোতার পথও খোলা থাকতে পারে। বিএনপি এখনো কিছু আসনে প্রার্থী ঘোষণা না করায় আলোচনার সুযোগ বজায় রয়েছে। ফল না মিললে এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদসহ সাত দলের সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা রয়েছে।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার অভিযোগ করেন, ঢাকার বাইরে বিএনপি–জামায়াতের পেশিশক্তি তীব্র হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে তিনি জানান, দলটি ৩০০ আসনে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং বৃহত্তর রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।
অন্যদিকে দলটি প্রচলিত রাজনৈতিক কৌশল থেকে সরে এসে গবেষণানির্ভর, আধুনিক, ডিজিটাল প্রচারের ওপর জোর দিচ্ছে। তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে বেকারত্ব দূরীকরণ ও বাস্তবসম্মত সমস্যা সমাধানই হবে প্রচারের মূল বার্তা।
যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিক উস সালেহীন বলেন, চেতনার রাজনীতি নয়—সময়ের চাহিদা অনুযায়ী নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়তে চাই আমরা।
তবে জোটে যেতে একেবারেই অনাগ্রহী দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। তাঁর ভাষায়, আমরা স্বচ্ছ ও নতুন রাজনীতির পথে হাঁটতে চাই—জোট বা সমঝোতার রাজনীতি নয়। তবে মাঠে সুষ্ঠু পরিবেশ নেই, প্রশাসনের নিরপেক্ষতাও প্রশ্নবিদ্ধ—বিষয়টি আমরা সরকারকে জানিয়েছি।



