নির্বাচন সামনে নীরব জাপা
অভ্যন্তরীণ সংকট ও প্রতীক জটিলতায় ‘অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা’ নীতি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৫৬ এএম
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দেশজুড়ে নির্বাচনি কর্মকাণ্ড শুরু করলেও নীরব রয়েছে জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলটির শীর্ষ নেতারা আপাতত অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনায় ব্যস্ত। অস্থির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কোণঠাসা জাপা এখন ‘অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা’ নীতি গ্রহণ করেছে।
জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর জাতীয় পার্টিকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দেওয়া হয়। দলীয় কার্যালয়ে একাধিকবার ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলো জাপাকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে। ‘জাপার ঘাঁটি’ রংপুরেও সভা-সমাবেশ করতে গিয়ে বিভিন্ন বাধার মুখে পড়ছেন নেতা-কর্মীরা। ফলে দলীয় কার্যক্রম এখন ঘরোয়া বৈঠককেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে।
এদিকে জুলাই সনদ নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে জাপাকে ডাকা হয়নি। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপেও দলটিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, যা নিয়ে জাপার মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে।
ইসি সংলাপে ডাকবে কি না—সন্দেহে জাপা
জাপার মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী জানান, ইসি আমাদের ডাকবে কি না জানি না। তবে তারা বলেছে, ভোট করতে আমাদের সমস্যা হবে না।
জাপার দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম বলেন, নিবন্ধিত দল হিসেবে ইসির উচিত জাপাকে সংলাপে ডাকা। না ডাকলে এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ইসিকেই সামলাতে হবে।
তবে দলের এক প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ইসি ডাকুক বা না ডাকুক, জাপা নিজস্ব নীতিতেই কাজ চালিয়ে যাবে। নির্বাচন নিয়েই এখন তাদের ভাবনা।
অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে লাঙ্গল প্রতীকের জটিলতা
জাপার দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এখন বড় সংকটে রূপ নিয়েছে। ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মুজিবুল হক চুন্নু পৃথক দল গঠন করে নিজেদের ‘আসল জাতীয় পার্টি’ দাবি করেছেন এবং লাঙ্গল প্রতীকের মালিকানা দাবি করে ইসিকে চিঠি দিয়েছেন। এর আগে রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন দলও একই দাবি তোলে। ফলে ত্রিপক্ষীয় দ্বন্দ্বে ইসি জানিয়েছে—লাঙ্গল প্রতীকের প্রকৃত দাবিদারকে ‘খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না’।
এ বিষয়ে জাপার এক কো-চেয়ারম্যান বলেন, লাঙ্গল প্রতীকের প্রকৃত দাবিদার জি এম কাদেরই। ইসির নিবন্ধনও তাঁর পক্ষে রয়েছে। যারা বিচ্যুত হয়েছেন, তারা চাইলে নিজেদের প্রতীকে আলাদা নিবন্ধন নিক।
পরিস্থিতি বিবেচনায় নির্বাচন—জাপার অপেক্ষার কৌশল
জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের অভিযোগ করেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের বেশির ভাগ মানুষকে বাদ দিয়ে সরকারি ও আধা সরকারি দলগুলো নিয়ে নির্বাচন করতে চায়।
মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, চারদিকে মব সন্ত্রাস চলছে। তাই মাঠের সার্বিক পরিস্থিতি দেখে আমরা ভোটে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেব। তিনি জানান, প্রেসিডিয়াম সভায় নিয়মিতই নির্বাচনি পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
তিনি বিভিন্ন জেলা সফর করে তৃণমূলকে সংগঠিত করার নির্দেশ দিচ্ছেন। তার ভাষায়, যেকোনো পরিস্থিতির জন্য দলকে প্রস্তুত রাখছি। প্রার্থীও প্রস্তুত আছে। তবে এখন গুরুত্ব দিচ্ছি সংগঠন গোছাতে।
জাতীয় পার্টি তাই এখনো অপেক্ষায়—পরিস্থিতি অনুকূলে এলে তবেই তারা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনি মাঠে নামবে।



