Logo
Logo
×

রাজনীতি

দুই মাসে জামায়াতের সঙ্গে বিদেশি প্রতিনিধিদের ৩০ বৈঠক

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৫৯ এএম

দুই মাসে জামায়াতের সঙ্গে বিদেশি প্রতিনিধিদের ৩০ বৈঠক

জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা। গত দুই মাসে এমন অন্তত ৩০টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব বৈঠকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন, মানবাধিকার ইস্যু এবং নির্বাচনের পর জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

অভ্যুত্থানের পর অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে পুনরায় উত্থিত জামায়াতের নেতারা বলছেন, এসব বৈঠকের মাধ্যমে বিদেশিদের মধ্যে দলের প্রতি পূর্বের নেতিবাচক ধারণা বদলে যাচ্ছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বিদেশিরা বোঝার চেষ্টা করছেন—নির্বাচনের পর ক্ষমতায় বা বিরোধী দলে থাকুক, জামায়াত দেশকে কোন পথে নিতে পারে।

জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, বিদেশি কূটনীতিকেরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে জামায়াত রাষ্ট্র পরিচালনায় ভূমিকা রাখতে পারে। তাই তারা জানতে চাইছেন, জামায়াত কী চায়, কীভাবে চায় এবং ভবিষ্যতে কী করতে চায়।

সর্বশেষ বুধবার জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের বসুন্ধরার কার্যালয়ে ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। একই দিন আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত আবদেল ওহাব সাইদানিও জামায়াতের আমিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এসব বৈঠকে বাংলাদেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, আগামী নির্বাচন, গণতন্ত্রের বিকাশ, বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে।

দলটির সূত্র অনুযায়ী, গত দুই মাসে অন্তত ৩০টি বিদেশি মিশনের প্রতিনিধি জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এসব বৈঠকের ছবি ও আলোচনার বিষয়বস্তু সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াও জামায়াতের ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়েছে।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, বিদেশিদের আগ্রহের মূল কারণ এই দলের প্রতি জনগণের আগ্রহ। তাঁরা বুঝেছেন, জামায়াতের জনসমর্থন রয়েছে। আলোচনায় তাদের যেমন কূটনৈতিক স্বার্থ আছে, আমাদেরও লক্ষ্য—দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও বিনিয়োগ বাড়ানো।

শুধু জামায়াত নয়, বিদেশি কূটনীতিকেরা বিএনপি ও নতুন রাজনৈতিক শক্তি এনসিপির নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। তবে গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক ময়দানে জামায়াতের সক্রিয় ভূমিকা বিদেশিদের আগ্রহের কেন্দ্রে এনেছে দলটিকে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, নির্বাচন হলে বোঝা যাবে, আগ্রহ বেড়েছে কি না। আর বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, এগুলোকে অস্বাভাবিক কিছু নয়। নির্বাচন সামনে রেখে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই বিদেশিরা আলোচনা করছেন।

জামায়াতের আমির ও শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে গত ৪ সেপ্টেম্বর ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, ৯ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার, ১০ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক ও অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার সুসান রাইল, ১১ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার খোজিন, ১৬ সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দল ও চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সাক্ষাৎ করেন।

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সুইডেন, ব্রাজিল, সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা জামায়াত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর আগে সিঙ্গাপুর, ভুটান, আর্জেন্টিনা এবং আরও কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরাও সাক্ষাৎ করেছেন।

জামায়াত সূত্রে জানা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশ বাংলাদেশে ইসলামপন্থী রাজনীতির ভবিষ্যৎ এবং রাজনৈতিক ভারসাম্যের সম্ভাব্য পরিবর্তন বোঝার চেষ্টা করছে।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, গত ২৮ সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনের প্রতিনিধিদল জানতে চেয়েছিল, ক্ষমতায় গেলে জামায়াতের নীতি কী হবে।

কূটনৈতিক সূত্রের মতে, সাম্প্রতিক দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের জয়ও বিদেশিদের আগ্রহ বাড়িয়েছে। তারা জানতে চাইছেন, এই প্রভাব জাতীয় নির্বাচনেও প্রতিফলিত হবে কি না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, জামায়াত যেহেতু ইসলামি রাজনৈতিক দল, বিদেশিরা জানতে চাইছেন, তারা ক্ষমতায় গেলে কী করবে এবং কীভাবে দেশ পরিচালনা করবে।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য মো. আব্দুল আলীম বলেন, জুলাই আন্দোলনের পর জামায়াতকে বাদ দিয়ে কোনো রাজনৈতিক সমীকরণ দাঁড় করানো সম্ভব নয়। বিদেশিরা বুঝতে চাইছেন, নির্বাচনের পর তাদের অবস্থান কী হবে—সরকারে না বিরোধী দলে।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন